হাজীগঞ্জে কার ভুল তথ্যে ৪২ শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত?
হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তথ্য গোপন করে ফাইল প্রেরণের কারণে ৪২ শিক্ষক পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পদোন্নতি না হওয়ার কারণে উপজেলার ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থেকে গেলো। আর এ কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে বেশ কিছু শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। জেলার মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা ব্যতীত অন্য সকল উপজেলার পদোন্নতি সংক্রান্ত গেজেট গত ১১ জুলাই প্রকাশ হয়ে গেছে।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সহকারী শিক্ষকগণের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনায় আরো বলা হয়, পদোন্নতির জন্য যাদের তালিকা পাঠানো হবে তাদেরকে অবশ্যই এইচএসসি পাস হতে হবে। কিন্তু হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে অমান্য করে ১২ জন এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির তালিকা প্রেরণ করেন, আর এ কারণে হাজীগঞ্জকে বাদ রেখেই গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কথিত আছে এসএসসি পাস শিক্ষকগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তথ্য গোপন আর অধিদপ্তরে ফাইল প্রেরণের কারণে এমনটা হয়েছে। আর এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষক আর তাদের সহকর্মী শিক্ষকগণের ফেসবুকে সরব থাকতে দেখা গেছে। পদোন্নতি আটকে যাওয়ার কারণে হাজীগঞ্জের ৪২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো এক ধাপ পিছিয়ে গেলো।
গত ১১ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ আব্দুল ওয়াহেদের স্মারক নং ৩০.০০.০০.০০৮.১২.০৪৩.১৮-৬১৪-তে স্বাক্ষর মতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, চাঁদপুর সদরে ২৯ জন, কচুয়ায় ৫৭ জন, শাহরাস্তিতে ৩৪ জন, হাইমচরে ২৫ জন, ফরিদগঞ্জে ৫০ জন, মতলব উত্তরে ৪৫ জন ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩৫ জন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। হাজীগঞ্জ থেকে ৪৭ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ৪২ জনের ভাগ্যে ঘটে অফিসের অব্যবস্থাপনার খড়গ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মোঃ কাউছার জানান, যখন পদোন্নতির কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, তখন আমি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত ছিলাম। আমার জানা মতে ভুলবশত অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাই পদোন্নতি হয়নি। নতুন করে কাগজপত্র সংশোধন করে পাঠানো হয়েছে, তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন কাউছার।
হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা আর যারা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসেন। কাগজপত্রের ভুলের কারণে আমি নিজেও পদোন্নতি বঞ্চিত।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকার জানান, কাগজপত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় কিছু ঝামেলা হয়েছে। তিনি বলেন, সহসাই পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের পদোন্নতি হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। যদি কেউ অফিসের কথা বলে ঘুষ বাণিজ্য করে থাকে, সেটা তাদের বিষয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান, পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী হাজীগঞ্জ উপজেলার তালিকায় ১২ জন অযোগ্য শিক্ষকের নাম থাকায় হাজীগঞ্জ ব্যতীত অন্য উপজেলার পদোন্নতি হয়েছে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নীতিমালা ও তালিকা অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রক্রিয়াধীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে অভিযোগ পাইনি।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ