ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন
ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
একইদিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও ভোট হবে।
জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের আলাদা তফসিল ঘোষণা করা হবে।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন ও নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচন হবে।
এতে বিজয়ী মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলররা বর্তমান পরিষদের অবশিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে পারবেন। অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন নবনির্বাচিতরা।
রোববার কমিশনের ১৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আইনগত কোনো জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচনে আলাদা তিনটি তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। একদিনই তিনটি তফসিল ঘোষণা করা হবে। ভোটও হবে একইদিনে।
বৈঠক শেষে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কোনো আইনি জটিলতা নেই। তাই ইসি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় যুক্ত নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, কিন্তু প্রার্থী হতে পারবেন না।
এদিকে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে কেউ কেউ নির্বাচনে আইনি জটিলতার শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাদের ধারণা ছিল মহলবিশেষ কলকাঠি নেড়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনও আটকে দিতে পারেন। কিন্তু রোববার কমিশনের এ সিদ্ধান্তের ফলে আপাতত ওই তৎপরতা কেটে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের অনেকেই বলেন, কমিশনের এ সিদ্ধান্তে আমরা খুবই খুশি। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কেউ এ নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিনা? ভোট গ্রহণ পর্যন্ত সেই শঙ্কা থেকেই যাবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন ইসির ঘোষণার পরও ভোটারদের শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। তাদের ধারণা (ভোটারদের) তফসিল ঘোষণার আগে-পরে মহলবিশেষ আইনি মারপ্যাঁচে এই নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে পারেন।
নতুন ওয়ার্ডগুলোর কারণে নির্বাচনে আইনি জটিলতার বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, কোনো আইনি জটিলতা দেখছি না। আইনি জটিলতার আশঙ্কা থাকলে কমিশন নীতিগতভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিত না। ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা বা মামলা হলে কমিশন কী পদক্ষেপ নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন এ ধরনের প্রশ্ন আসবে বা সেই ধরনের নির্দেশনা এলে বিষয়টি কমিশনে উত্থাপন করব। এর আগে এ বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে পারি না।
রোববার অনুষ্ঠিত ইসির বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা সভাপতিত্ব করেন। এতে দু’জন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অপর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিদেশে এবং নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সরকারি সফরে ঢাকার বাইরে থাকায় বৈঠকে ছিলেন না।
বৈঠক শেষে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অনুরোধ পেয়েছি। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন নির্বাচন করার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া এ নির্বাচনে আইনি বাধা বা জটিলতা নেই। কাজেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সংযুক্ত ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচনের তফসিল জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণের ব্যাপারে কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। একইদিন কাউন্সিলর পদেও তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণ করা হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা রয়েছে, সেগুলোতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কম। এসব বিবেচনায় রেখে ভোটের দিন নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আগামী ২০ ডিসেম্বর ইসির কর্মকর্তারা বৈঠকে বসবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পহেলা ডিসেম্বর থেকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে ৩ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি এবং ৪ ডিসেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৬ অনুযায়ী মেয়রের শূন্যপদে নির্বাচনের জন্য ইসিকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী, পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত মেয়র সিটি কর্পোরেশনের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য ওই পদে বহাল থাকবেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণের বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তরে ১৮টি সাধারণ ও ৬টি সংরক্ষিত এবং একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৮টি সাধারণ ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নতুন যুক্ত করা হয়েছে। এসব ওয়ার্ড গঠনের প্রজ্ঞাপন ২৩ জুলাই প্রকাশের পর তা ২৬ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। নতুন ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য ৮ আগস্ট অনুরোধ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সীমানা নির্ধারণের গেজেট যাচাইয়ে ৩১৮টি ভোটার এলাকা পায় ইসি। পরবর্তীকালে ২২ নভেম্বর বাদ পড়া ২টি ভোটার এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে এবং একটি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। নতুন যুক্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের মেয়াদ কতদিন হবে তা আইনে নেই বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করেছেন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্মসচিব (চ. দা.) ফরহাদ আহাম্মদ খান।
নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নতুন গঠিত ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা পরিষদের অবশিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কাউন্সিলরদের মেয়াদ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন-কানুন পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, আলাদা কোনো প্রজ্ঞাপন জারি বা ঘোষণার প্রয়োজন নেই।
যেহেতু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচন হয়ে থাকে, অনুরূপভাবে ঢাকার দুই সিটির নবগঠিত ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচন হবে। কাউন্সিলর পদে সাধারণ নাকি উপনির্বাচন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে তারা সিটি কর্পোরেশনের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন। তা না হলে ঢাকার দুই সিটিতে সারাবছর দু’বার নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
হালনাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩১ জানুয়ারি প্রকাশ হবে। তালিকার নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই ভোট দিতে পারবে। জানুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভোট গ্রহণ হবে। সেই হিসাবে হালনাগাদে যারা নতুন ভোটার হবেন তারা ভোট দিতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে সেই অনুযায়ী নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কিন্তু প্রার্থী হতে পারবে না।
এতে জটিলতা দেখা দিতে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই তফসিল ঘোষণা করা যেতে পারে। তফসিলের পর থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত ৪৫ দিন সময় রাখার আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় নির্দিষ্ট মেয়াদেই ভোট করা সম্ভব হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর