• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মন্ত্রী ছায়েদুল হকের জানাজা

প্রকাশ:  ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৩৯ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১০:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়েছে।

রোববার সকালে সেখানে জানাজা নামাজের পর ছায়েদুল হকের মরদেহ হেলিকপ্টারে তার নির্বাচিত এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নেয়া হবে।

সেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জানাজা শেষে বাদ জোহর বাবা-মায়ের কবরের মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার ছেলে ডা. এএসএম রায়হানুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত।

ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা। আরও শোক জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মিজানুর রহমান যুগান্তরকে জানান, মন্ত্রী ছায়েদুল হক দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, ইউরিন ইনফেকশন ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছিলেন। গত আগস্ট থেকে তিনি প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সংক্রমণে ভুগছিলেন এবং ১৩ ডিসেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর একদিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্ষীয়ান নেতা ছায়েদুল হককে হারাল আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে মন্ত্রী ছায়েদুল হককে দেখে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর আগে তিনি খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী ছায়েদুল হক ১৯৪২ সালে জেলার নাসিরনগরে পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামে মেহের চান্দ বিবি ও সুন্দর আলীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ অর্জনের পর এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৫-৬৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলে ভিপি নির্বাচিত হন। ছায়েদুল হক ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত লেম্বুছড়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো নাসিরনগর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ছায়েদুল হকের সময়েই মৎস্য ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। ইলিশ উৎপাদনেও তার অবদান রয়েছে।

১৬ ডিসেম্বর নাসিরনগরে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নির্বাচনী এলাকা নাসিরনগর উপজেলায়। প্রিয় মানুষটির শেষ সংবাদ জানতে রাত থেকেই পূর্বভাগ গ্রামের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। ছায়েদুল হকের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুই দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাফি উদ্দিন বলেন, নাসিরনগরে ছায়েদুল হকের বিকল্প আর কেউ নেই। তার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়। ছায়েদুল হকের মতো সৎ নেতার মৃত্যু নেই। এদিকে তার মৃত্যুতে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপি বিজয় দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

সূত্রঃ যুগান্তর