• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

৮৬ দিনে কুরআনের হাফেজ শিশু ইয়াসিন

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২০ | আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

ইয়াসিন আরাফাত খান। বয়য় সাড়ে ১১ বছর। এই বয়সটা তার দুরন্তপনার। মাঠ-ঘাট দৌড়ে চারপাশ মাতিয়ে তোলার। কিন্তু সময়টা পবিত্র কুরআন পাঠে ব্যয় করে মাত্র দুই মাস ২৬ দিনে পূর্ণ হাফেজ হয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে কক্সবাজারের শিশু ইয়াসিন আরাফাত খান।

হাফেজদের মতে, পূর্ণাঙ্গ কুরআন মুখস্ত করতে একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ৬ মাস। কিছু কিছু শিশু সাড়ে চার থেকে ৫ মাসেও এটি সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু মাত্র দুই মাস ২৬ দিনে পবিত্র কুরআন আয়ত্ব করে হাফেজ হওয়ার নজির চলতি সময়ে নেই বললেই চলে। তাই ইয়াসিনের এ অর্জন বিশ্বের নতুন বিস্ময়।

এত অল্প দিনে ইয়াসিন আরাফাত পবিত্র কুরআন শরিফ হেফজ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক কুরআন তেলাওয়াত সংস্থার (ইকরা) সহ-সভাপতি বিশ্বজয়ী হাফেজে কুরআন কিংবদন্তি ক্বারি আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।

তিনি বলেন, আমি প্রায় ৩৭ বছর ধরে পবিত্র কুরআনের খেদমত করে চলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছি। কিন্তু এমন প্রতিভা দেখিনি, শুনিনি। এটি সত্যিই বিরল প্রতিভা। ইয়াসিন আরাফাত শুধু কক্সবাজারের নয়, পুরো দেশের গৌরব। মুসলিম জাতির গৌরব। সে অনেক বড় হবে।

তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসা কক্সবাজার শাখার অয়োজনে বুধবার রাতে ইয়াসিন আরাফাতকে দেয়া সংবর্ধনায় অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। তিনি বলেন, সাধারণ গল্প-কবিতার শ্লোক মুখস্ত রাখা যেখানে কঠিন সেখানে পবিত্র কোরআনের মতো ভিন্নভাষার একটি গ্রন্থ আত্মস্থ করা আরো বেশি দুরুহ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসা সূত্র মতে, মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফাত দৈনিক ৭ পৃষ্ঠা কুরআন মুখস্ত করেছে। সঙ্গে এক পারা করে পূর্বপাঠের হাজিরাও দিয়েছে। সমান তালে চালিয়ে গিয়েছে ৫ম শ্রেণির সাধারণ পড়ালেখা। পেয়েছে বৃত্তি। দখল আছে ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক ইভেন্টেও। বর্তমানে উক্ত মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে সে। ওখানেও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে হাফেজ ইয়াসিন আরাফাত। এমন মেধা সত্যি বিরল! তার বাবা গোলাম আজম খান দৈনিক নয়াদিগন্তের কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা। তার মা সালমা খাতুন গৃহিণী।

হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি অনেক ছাত্র পেয়েছি। ইয়াসিনের মতো পাইনি। তার মেধায় জাদুকরি শক্তি আছে। পড়া দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মুখস্থ করে ফেলে। শিক্ষক ডেকে হাজিরা দেয়। চমৎকার সুশৃঙ্খল, অমায়িক ও মার্জিত হওয়ায় তার প্রতি সবার আকর্ষণটা আলাদা। ইয়াসিনের মেজাজে নেই কোনো রাগঢাক। সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে ভিন্ন। সাদাসিধে ইয়াসিনের জীবন অনেক সম্ভাবনায় ভরা।

তিনি আরো বলেন, সব ছাত্র যখন গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকে, ওই সময়েও উঠে পড়তে দেখেছি ইয়াসিন আরাফাতকে। সবার আগে পড়া হাজিরা দেয়ার প্রবল জেদ ছিল তার ভেতরে। ছিল না ফাঁকিবাজির চরিত্র। আচরণ ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। আমল-আখলাকে পরিপূর্ণ এই ছেলেটি অনেক বড় হবে। তার জন্য অপেক্ষা করছে স্বর্ণালি সময়।

তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদরাসা কক্সবাজার শাখার অধ্যক্ষ হাফেজ রিয়াদ হায়দার বলেন, ক্লাসের হাজিরা খাতা অনুসারে মাত্র দুই মাস ২৬ দিনে (৮৬ দিন) ৩০ পারা কুরআন শরিফ খতম করেছে ইয়াসিন আরাফাত। এখন থেকে যুক্ত হলো ‘হাফেজ’ শব্দ। যে শব্দটি কেনা যায় না। চুরি করেও মেলে না হাফেজ সনদ। মেধা-সাধনা দিয়ে নিতে হয় এই সনদ।

তিনি বলেন, সাধারণ ক্লাসের পাশাপাশি এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কুরআন হেফজ করার দৃষ্টান্ত এই অঞ্চলের জন্য নজিরবিহীন। পুরো দেশে হয়তো দু-একটা থাকতে পারে। হাফেজ আরাফাত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও পিছিয়ে নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বার্ষিক অনুষ্ঠানে সেই কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছে আরাফাত। সে ভবিষ্যতে বিশ্বমানের হাফেজে কোরআন হবে, ইনশাল্লাহ। বিশ্বব্যাপী আল-কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে সবার দোয়া প্রার্থনা করেছেন হাফেজ ইয়াসিন আরাফাত।

হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল সিফাত এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইয়াসিনের দাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মরহুম ডা. মোহাম্মদ ইছহাক খান টেকনাফের সুপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। নানা আলহাজ ছালেহ আহমদ সৌদি আরবের একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ও প্রাণ-আরএফএল’র ডিলার। তার স্থায়ী নিবাস টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সাতঘরিয়াপাড়া এলাকায়।