• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে সংগীত সন্ধ্যা

ভারতের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক চাইলেই নস্যাৎ করা যাবে না : মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ:  ০১ জুলাই ২০১৯, ০৯:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন তখন ছিলো কানায় কানায় ভরপুর। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের সংগীত সন্ধ্যায় সুরের মূর্ছনায় আবিষ্ট ছিলো দর্শক শ্রোতারা। উদাস মনে সংগীত ও নৃত্য উপভোগ করলেন সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। বাদ যাননি উপস্থিত অতিথিবৃন্দও। তারা গভীর আগ্রহ নিয়ে মন ভরে উপভোগ করেছেন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
    ২৯ জুন শনিবার ভারতীয় হাইকমিশনের বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার ও সহকারী হাইকমিশনারের উদ্যোগে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার চাঁদপুরে আয়োজন করে এ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আনন্দঘন পরিবেশে চট্টগ্রামে কর্মরত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রের মাধ্যমে সঙ্গীত পিপাসু সাধারণ মানুষসহ চাঁদপুরের সুধীজনের মধ্যে এক মিলনমেলা পরিলক্ষিত হয়। স্বল্প সময়ের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরেন অকপটে। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ভারতবাসীর কাছে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা বাঙালি জাতি কোনোদিন ভুলবে না। বাঙালি জাতি বীরের জাতি, তারা অকৃতজ্ঞ নয়। তারা উপকারকারীদের প্রাপ্য সম্মান দিতে জানে। তিনি বলেন, যখন পাকিস্তানের সাথে আমাদের লড়াই বাঁধে তখন কিন্তু সে দেশে নকশাল আন্দোলন চলছিল। ভারতেও ছিলো অস্থিরতা। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী থেমে থাকেন নি। তিনি আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের জন্যে জনমত তৈরি করেছিলেন। খাদ্য দিয়েছেন, আমাদের অসহায় মানুষদের আশ্রয় দিয়েছেন, সর্বোপরি যুদ্ধের জন্যে সৈন্য দিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ১২ হাজার সৈন্য প্রাণ হারায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে তাদের জন্যে যেমনি আমরা ব্যথিত, তেমনি ভারতের সৈন্যদের জন্যও আমরা ব্যথিত। ভারতের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক চাইলেই নস্যাৎ করা যাবে না। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে ততোদিন বাংলাদেশের মানুষ ভারতের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে। তিনি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করায় ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। তা মনের অজান্তেই এগিয়ে চলে। আর এ ধারাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকা- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। তিনি তিস্তার পানি সমস্যার সমাধানেও হাইকমিশনারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
    অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমানের সভাপ্রধানে এবং বিশিষ্ট লেখক ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার উপস্থাপনায় আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মোঃ আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার কর্তৃক চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, উপস্থাপক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পক ও নৃত্যাঙ্গনের পক্ষে নৃত্যাঙ্গনের সভাপতি প্রফেসর রনজিত কুমার বণিক, সাধারণ সম্পাদক তপন সরকার, নৃত্যাঙ্গনের অধ্যক্ষ রুমা সরকারের হাতে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
    ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারকে চাঁদপুর পুরাণবাজার শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ হতে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক নিপা চৌধুরী, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক ও চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাজাদাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সহ-সভাপতি শরীফ চৌধুরী, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ  বিনয় ভূষণ মজুমদার, অযাচক আশ্রম চাঁদপুরের অধ্যক্ষ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী, চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ, চাঁদপুর জগন্নাথ মন্দিরের অধ্যক্ষ বিশাল গোবিন্দ দাসাধিকারী, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক প্রমুখ।
    অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশে (চট্টগ্রাম) নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী চাঁদপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানান এমন একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্যে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সুযোগ হয়েছে চাঁদপুরের শিল্পীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার। শিল্পীরা খুব ভালো করেছে, আগামীতে তারা আরো ভালো করবে। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার আগামীতে যাতে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে সে দিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো।
    সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নৃত্যাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক তপন সরকারের উপস্থাপনায় একক সংগীত পরিবেশন করেন চাঁদপুরের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পক। শিল্পীর কণ্ঠে দেশাত্মবোধক, রবীন্দ্র, নজরুল, লালন, হাসান রাজার গানসহ আধুনিক গানে বিমোহিত হয়ে পড়েন দর্শক সাধারণ। তারা পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করতে থাকেন শিল্পীর গান। সংগীতের পরে শিল্পকলা মিলনায়তনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। মঞ্চ মাতিয়ে উপস্থিত দর্শকদের হৃদয় কাঁপিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠিত নৃত্য শিক্ষালয় নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীরা। উপস্থিত দর্শকরা মুহূর্মুহু করতালির মধ্য দিয়ে মাতিয়ে তুলেন শিল্পকলার অডিটোরিয়াম।

 

সর্বাধিক পঠিত