• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ

গণতন্ত্রের চর্চা কখনো বিতর্ক ছাড়া সুষ্ঠু হয় না : বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

প্রকাশ:  ১৯ জুন ২০১৯, ০৯:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, গণতন্ত্রের চর্চা কখনো বিতর্ক ছাড়া সুষ্ঠু হয় না। মূর্খরা তর্ক করে, জ্ঞানীরা বিতর্ক করে। আমরা তর্ক করতে ভালোবাসি, আমরা তর্কপ্রিয় জাতি। আমাদের মনে রাখতে হবে, তর্কে কেউ জেতে না। বিতর্কে হার-জিত আছে কিন্তু বিতর্কে সবাই জিতে। আজকে যারা বিতর্কে জয়লাভ করেনি তারাও জয়ী হয়েছে।
গতকাল চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৫০টি দল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে জেনে আমি আনন্দিত হলাম। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এই বিতার্কিকদের তৈরি করার জন্যে আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি দুটি বিতর্ক সম্পূর্ণ দেখেছি। অত্যন্ত সুনির্দেশিত বিতর্ক। প্রত্যেক বিতার্কিক অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। দুটি বিতর্কই আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। আমি সবার পক্ষ থেকে বিতার্কিকদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। ১১ বছর পেরিয়ে আগামী বছর এ প্রতিযোগিতাটি এক যুগ পূর্তি করবে। এ প্রতিযোগিতার প্রতি আমাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা থাকবে।
বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিতার্কিককে উচ্চারণের প্রতি আরো বেশি যতœশীল হতে হবে। উচ্চারণ বিভ্রাট হলে সুন্দর কথা বললেও মানুষ গ্রহণ করতে চায় না। দেখে দেখে বা লিখিত নোট দিয়ে বিতর্ক হয় না। বিতর্ক হচ্ছে তাৎক্ষণিক বাচিক শক্তি। যুক্তিখ-ন পর্ব খুব গুরুত্বপূূর্ণ। একই কথার পুনরাবৃত্তি চলে না। যুক্তিখ-নে নতুন করে প্রস্তাবনাও আনা যাবে না। প্রতিপক্ষের দুর্বলতায় আঘাত করতে হবে। বিতর্কের জন্যে পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা ছাড়া ভালো বিতার্কিক হওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক, জাতীয় সংবাদ, সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানলে বিতর্কে ভালো করা যাবে না। বিতর্কে যুক্তির বাইরে আবেগ প্রদর্শন করা ঠিক হবে না। আবেগ দিয়ে কখনো যুক্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। যুক্তি কঠিন, ক্ষুরধার ও নির্মম। যুক্তিকে মানতে হবে। বিতর্কে হাস্যরস থাকতে হবে। কারণ হাস্যরস প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে। হাস্যরস না থাকলে কোনো কিছু প্রাণবন্ত হয় না। আমরা চাই বিতর্কের জয় হোক। বিতর্কের জয় মানে যুক্তির প্রতিষ্ঠা, যুক্তির প্রতিষ্ঠা মানে সত্যের প্রতিষ্ঠা। তিনি এ সময় সকল অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ-এর চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়কের সভাপ্রধানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শাকুর মজিদ, কবি মারুফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ মফিজুর রহমান, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ও সিরাজুল কবির চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও সিকেডিএফ সভাপতি কাজী শাহাদাতের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও বিতার্কিক ছিলাম। অনেকদিন পর আজ মনোযোগ দিয়ে বিতর্ক শুনলাম। এতো এতো শিক্ষার্থীর বিতর্কের প্রতি আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, চাঁদপুরবাসীর জন্যে সত্যিই আজ আনন্দের দিন। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্যে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছে। আমি বিতর্কে মুখরিত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আমি মনে করি, এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে। এজন্যে পাঞ্জেরী ও চাঁদপুর কণ্ঠকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মফিজুর রহমান বলেন, আজকে চাঁদপুর কণ্ঠের রজতজয়ন্তী ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল। চাঁদপুর কণ্ঠ তাদের রজতজয়ন্তী উদ্যাপনের জন্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতাকে বেছে নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। বিতর্কের ক্ষেত্রে চাঁদপুর মডেল হয়েছে। এত সুন্দর করে যে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক করা যায়Ñতার সুন্দর উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চাঁদপুর কণ্ঠ।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে কামরুল হাসান শায়ক বলেন, বিতর্ক আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব আমি দিয়েছিলাম। কাজী শাহাদাত সে প্রস্তাবকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু করেন। এ প্রতিযোগিতাটি দেখতে দেখতে আজ ১১ বছরে পৌঁছেছে। আজকে চাঁদপুর বিতর্কে মডেল জেলায় রূপ নিয়েছে। আমাদের তরুণরা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করছে। আসুন এই শাণিত অগ্রযাত্রায় আমরা সবাই অংশগ্রহণ করি। যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে এ দেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি। তিনি এ সময় প্রণোদনামূলক বৃত্তি প্রদানের জন্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে একাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের বিতার্কিকদের সনদ, ক্রেস্ট ও পুরস্কার  প্রদান করেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় শিক্ষামন্ত্রীর প্রণোদনা বৃত্তিও প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ১৮ জন কৃতী বিতার্কিককে ২ হাজার টাকা করে মোট ৩৬ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড প্রদান করেন মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ। সবশেষে দ্বাদশ বিতর্ক প্রতিযোগিতার শ্লোগান উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। শ্লোগানটি হচ্ছে ‘বিতর্কে নূতন জোয়ার, যুক্তিতে যুগ খুললো দুয়ার’। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও চাঁদপুরের সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, অভিভাবকবৃন্দ ও কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বাধিক পঠিত