সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজমের কথা
আব্দুর রাজ্জাক
মানুষ ক্রমেই রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে ও রহস্যজনকভাবে মারা যাচ্ছে। শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে, ফিরে এলে ওদের গলায় দেখা যাচ্ছে ধারালো দাঁতের সূক্ষ্ম ক্ষতচিহ্ন। এসব কিসের আলামত? ' প্রাচীনকাল থেকে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষ বহুবিধ রকমের কুসংস্কার ও আত্মায় বিশ্বাসী ছিলো। ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস হচ্ছে তার মধ্যে একটি কুসংস্কার। এটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব সাহিত্যে তৈরি হয়েছে ভ্যাম্পায়ারিজমের মতো মতবাদ। ভ্যাম্পায়ার (াধসঢ়রৎব) : রক্তচোষাজীব ও ভীতদের কল্পনা। ভ্যাম্পায়ার শব্দটি লিথুয়ানিয়া ভাষার 'ওযেম্পটি' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'পান করা'। জার্মান ভাষার 'ওয়্যাম্পিয়ার' শব্দটি ১৭৩২ সালে ইংলিশে ভ্যাম্পায়ার হয়ে প্রকাশ পায়, যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ভ্যাম্পায়ারিজম মতবাদের জন্ম হয়, যা সাহিত্য, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিত্রকলায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভ্যাম্পায়ারিজম (ঠধসঢ়রৎরংস) : যে সকল অতিপ্রাকৃত মানবদেহের জীবনীশক্তি (রক্ত, আত্মা) শুষে নিয়ে বেঁচে থাকে তারাই ভ্যাম্পায়ার। আর এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ভ্যাম্পায়ারিজম মতবাদ। ভ্যাম্পায়ার ধারণায়-গভীর রাতে পৃথিবীর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন সন্তর্পণে কে যেনো বের হয়ে আসে গুহা, খনি, গাছের আড়াল এবং ভূতুড়ে বাড়িঘর থেকে। ভ্যাম্পায়ার একটি পৌরাণিক ও লোককথার প্রাণী, যার বিশ্বাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ ব্রায়ান ফ্রস্ট মনে করেন, "রক্তচোষা দৈত্য ও ভ্যাম্পায়ারের বিশ্বাস মানুষের অস্তিত্বের মতোই একটি ব্যাপার"। আঠারো শতকের প্রথম দিকে পূর্ব ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার কুসংস্কারের মাত্রা যতই বাড়তে থাকে মানুষের মধ্য মাসহিস্টেরিয়া ততোই বৃদ্ধি পায়। ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাসীদের ধারণা ছিলো যে, সকল মানুষ, পশু-পাখি, জানোয়ার অস্বাভাবিকভাবে মারা যায় ; মৃত্যুর পরে তাদের দেহ অক্ষত থাকলে তারা ভ্যাম্পায়ার হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং এ ভ্যাম্পায়ার যাকে কামড়াবে সেও ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হবে।
প্রস্তর যুগে আত্মায় বিশ্বাস ছিলো একটি সর্বসম্মত ধারণা। এই সময়ের মানুষ তার পূর্ব পুরুষ, বিভিন্ন প্রতীক এবং প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করতো। সেই সাথে চলতো যাদুবিদ্যার চর্চা। মানব গোষ্ঠী নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্যে নরমাংস ভোজনের পথ বেছে নেয়। 'করবাই' গোষ্ঠী মনে করে অন্য কোনো মানব মানবদেহের মাংস ভোজন করলে আত্মিক শক্তি লাভ করা যায়।
গফ-গুহায় (১৫০০ বিসি) মানবদেহের হাঁড়ের উপর মানুষের দাঁতের কামড় পাওয়া যায়। ব্রোঞ্জ যুগে (২৫০০ বি সি) অন্যের দেহ ভক্ষণ করে আত্মিক শক্তি লাভের জনশ্রুতি আছে। এডিম্মু ছিলো প্রাচীন আসিরীয় অঞ্চলের প্রতিশোধপরায়ণ আত্মা। যাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হতো, সঠিকভাবে কবর দেওয়া হতো না, মরার পরে আচার অনুষ্ঠান হতো না, তাদের আত্মা পরিণত হতো 'এডিম্মু'-এ। জীবিত মানুষের প্রতি ছিলো তার ঈর্ষা।
পরবর্তীতে লৌহযুগে ইউরেশীয়া অঞ্চলের অতিপ্রাকৃত আত্মা প্রথমবারের মতো দেহ ধারণ করে। বৈদিক মিথের (৫০০ বি সি) 'বেতাল' প্রথমে ছিলো এক ধরনের দুষ্ট আত্মা, যাদুর মাধ্যমে তারা দেহে প্রবেশের ক্ষমতা লাভ করে। জোম্বির মত নির্বোধ নয়; ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিথোলজিতে যুক্ত হলো দেহধারী বুদ্ধিমান পিচাশ। এদেরও মানব দেহের জীবনী শক্তির প্রতি আকর্ষণ ছিলো।
ক্লাসিককালে গ্রীক মিথের প্রথমদিকেই (৪০০ বিসি ই) শুরু হয় মানবদেহের প্রতি তীব্র আকর্ষণযুক্ত অপদেবতায় প্রভাবিত একদল মেয়ে। জনশ্রুতি আছে, লিলিথ স্বর্গ থেকে রেগে কিংবা বহিষ্কৃত হয়ে পৃথিবীতে চলে আসে এবং অশুভ হয়ে দাঁড়ায়। লিলিথকে বলা হয় সকল অশুভ জীবের মাতা। যতো উবসড়হং আছে তার কিছু এসেছে লিলিথ থেকে, তারাই এর সন্তান। ঈশ্বর যখন লিলিথকে নেয়ার জন্যে দূত পাঠালেন, লিলিথ ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালো। দূত জানালো ফিরে না গেলে তার একশত সন্তান হত্যা করা হবে। লিলিথও মানবশিশু হত্যার ঘোষণা দিলো। ইহুদী মতে, লিলিথ ছিলো অপরূপ সুন্দরী। সে সেজেগুজে পুরুষগৃহে প্রবেশ করে কামলীলা সম্পূর্ণ করতো। পুরুষদের বীর্য সংগ্রহ করাই ছিলো তার উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, লিলিথের সাথে মিলন শেষে কোনো পুরুষ বাঁচত না। লিলিথ তখন সেই পুরুষের রক্ত পান করতো, আর সংগ্রহকৃত বীর্য ব্যবহার করে গর্ভবতী হয়ে আরো অশুভ সন্তানের জন্ম দিতো।
মধ্যযুগে জিপসীরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে মাইগ্রেট হতো। মূলত ভারত থেকে উদ্ভূত এই জাতিগোষ্ঠী সাথে করে নিয়ে আসে বৈদিক মিথ বেতালার বিভিন্ন ভার্সন, যার মধ্য থেকে উদ্ভূত হয় রেভেন্টের ধারণা। তারা বিশ্বাস করতো, জিপসীরা সাথে করে শয়তান নিয়ে এসেছে, যারা মৃতদেহে প্রবেশ করে মৃতদেহ জাগিয়ে তুলতে পারে। এরাই ছিল আধুনিক ভ্যাম্পায়ারের প্রথম পূর্ব পুরুষ।
উইলিয়াম অব নিউবার্গ-এর করা এক জরিপে (১১৯০ এস) ইয়র্কশয়ার এলাকায় অনেকেই দাবি করেন, মৃতদেহ কবর থেকে উঠে আসতে এবং জীবিতদের আক্রমণ করতে তারা দেখেছে। কেউ কেউ দাবি করেন, আক্রমণের পর রক্তও পান করেছে। মৃত ব্যক্তির কবর খুঁড়ে পাওয়া যায় লাশের মুখে রক্ত।
মধ্যযুগের শেষের দিকে (১৬০০ সিই) পূর্ব ইউরোপ জুড়ে আধুনিক ভ্যাম্পায়ার ধারণা রূপ নিতে থাকে। ইউরোপীয়ানদের মধ্যে ভ্যাম্পায়ার অনাবাসী মানুষ ছিলো, তারা প্রায় প্রিয়জনদের পরিদর্শন করতো এবং জীবিত অবস্থায় আশেপাশে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন বা মৃত্যু ঘটেছিল কি না তা পরীক্ষা করতো। তারা শর্টস পরতো এবং প্রায়শই ১৯ শতকের প্রথমদিকের তারিখগুলো থেকে আজকের গ্যান্ট, ফ্যাকাসে ভ্যাম্পায়ারের থেকে আলাদা আলাদা এবং হালকা অন্ধকারের মুখোমুখি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিলো। ঠধসঢ়রৎরপ সংস্থা অধিকাংশ সংস্কৃতির মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছিল। আঠারো শতকের বারকানস এবং পূর্ব ইউরোপে প্রাক-শিল্প সমাজে বিদ্যমান স্থানীয় বিশ্বাসে ভর (ঐুংঃবৎরধ) করে হিংস্রতার পর পশ্চিম ইউরোপে এ ভ্যাম্পায়ার শব্দটি জনপ্রিয় হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটির বিশ্বাস মৃতদেহ ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং মানুষকে রক্তপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আর পূর্ব ইউরোপে এদের স্থানীয় রূপগুলো ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল : আলবেনিয়ায় শত্রিগা, গ্রীসে ভ্রিমোলাকাস এবং রোমানিয়ায় স্ট্রিগোই। ইউরোপীয় সমাজে ভ্যাম্পায়ার আতঙ্ক এতো বেশি ছিলো যে, মানুষ একে অপরকে ভ্যাম্পায়ার বলে সন্দেহ করতো। এই স্ট্রিগোয়ারের ধারণা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, যা পেঁৗছে যায় চীন পর্যন্ত। সেখানে আর্বিভাব হয় জিযাংশির ধারণা। একদল জেগে ওঠা লাশ, যারা দেহ থেকে রক্তের মাধ্যমে শুষে নেয় আত্মা। এরা সারাদিন কফিনে বিশ্রাম নিতো, জেগে ওঠতো রাতে। ভ্যাম্পায়ার বিশ্বাস তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিলো। মানুষ একজন অন্যজনকে ভ্যাম্পায়ার বলে সন্দেহ করতো। তাই ভ্যাম্পায়ার থেকে বাঁচার জন্যে ব্যবস্থা নিতো। চিরস্থায়ীভাবে মারার জন্যে ভ্যাম্পায়ারের মৃতদেহের বুকের উপর বাইবেলের বাণী পড়তে পড়তে একটি ক্রুশ গেঁথে দিতো অথবা সম্পূর্ণ মৃতদেহ পুড়ে ছাই করা হতো। ভ্যাম্পায়ার যেহেতু হৃদপি-ে বাস করে, তাই হৃদপি- বরাবর লোহার গোঁজ মেরে দিতো।
ভ্যাম্পায়ারকে মারার জন্যে চার্চে পবিত্র পানি, রসুন ইত্যাদি ছিলো প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে ভ্যাম্পায়ার মেরে ফেললেও এরা মরে না, দিনের বেলায় লাশের মতো থাকলেও রাতের বেলায় এরা জ্যান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আধুনিক সময়ের মধ্য-ভ্যাম্পায়ারকে ভাবা হয় সাধারণত একটি কল্পিত সত্তা হিসেবে, যদিও চুপাকাবরা অনুরূপ ভ্যাম্পায়ারিক প্রাণীর বিশ্বাস কিছু সংস্কৃৃতিতে রয়ে গেছে। ভ্যাম্পায়ারের প্রথম স্থানীয় বিশ্বাস, মৃত্যুর পর শরীরের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার অজ্ঞতা এবং কিভাবে প্রাক শিল্প সমাজের লোকেরা এটি যুক্তিসংগত করার চেষ্টা করেছিল, তা ভেবে মৃত্যুরহস্য ব্যাখ্যা করতে ভ্যাম্পায়ারের চিত্র তৈরি করে। চড়ৎঢ়যুৎরধ-ঠধসঢ়ৎরংস এর কিংবদন্তীর সাথে যুক্ত ছিলো এবং অনেক মিডিয়ার এঙ্পোজার পেয়েছিল। সর্বপ্রথম ১৮৯৭ সালে চযরষরঢ় ইঁৎহব ঔড়হবং চিত্রকলায় ভ্যাম্পায়ার চিত্রিত করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাম্পায়ারের অনেক ফ্যান আছে। কিছু মানুষের ধারণা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা পেটের অসুখ দূর করতে নিয়মিত রক্ত পান করা উচিত। এমন চিকিৎসা বহুদিন যাবৎ চলে আসছে, যাকে বলে ঈষরহরপধষ ভ্যাম্পায়ার। এজন্যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরে ভ্যাম্পায়ার সোসাইটি গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডি জে উলিয়ামের মতে, 'মানুষের রক্তপানের কথা শুনলেই বিষয়টি আতঙ্কের মনে হয়, সাধারণভাবে প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস বলে মনে হয়।' গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ৩১ অক্টোবর হ্যালুইন পালন করা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে স্পেশাল হ্যালোইন পার্টির আয়োজন করা হয়। অনেক ছেলে মেয়েকে ভ্যাম্পায়ার কস্টিউম পরে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
ভীতিপ্রদ, অলৌকিক ও রোমান্স নিয়ে ভ্যাম্পায়ারিজম সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। ভয়, কল্পনা, মৃত্যু কখনোবা রোমান্স একত্রে জড়িয়ে সাহিত্যের এ ধারাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইংরেজ লেখক হোরাস ওয়ানপোলকের এ ধারার আদি লেখক বলা হয় তার উপন্যাস 'দ্যা ক্যাসল অব অটরান্টো' (১৭৬৪) কে। পরে আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং ঊনিশ শতকের প্রথমে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার মূল উৎস ছিলো কুসংস্কার, অলৌকিক শক্তির প্রতি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস, ভীতিপ্রদ মনোভাব। আধুনিক কথাসাহিত্যে ক্যারিশম্যাটিক এবং অত্যাধুনিক ভ্যাম্পায়ার প্রকাশের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে অত্যন্ত সফল গল্প এবং ভ্যাম্পায়ার নিয়ে প্রভাবশালী কাজ হয়েছিল। ১৮৯৭ সালে ব্র্যাম স্টোকারের ড্রাকুলাকে চিত্তাকর্ষক ভ্যাম্পায়ার উপন্যাস হিসেবে মনে করা হয় এবং সাহিত্যে আধুনিক ভ্যাম্পায়ারিজমের কিংবদন্তীর ভিত্তিটি উপলব্ধি করা হয়, যদিও এটি শেরিডান লে ফানুর ১৮৭২ সালের উপন্যাস 'কার্মিলা'-এর পরে প্রকাশিত হয়েছিল।
এই উপন্যাসের সাফল্যের সাথে চলচ্চিত্র, ভিডিও গেমগুলো সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজমের ধারণাকে আরো গতিশীল করে। ভ্যাম্পায়ারিজম নিয়ে জন পলোডির বই 'ঞযব াধসঢ়ুৎব' ব্র্যাম স্টোকারের প্রভাবশালী কাজ 'ড্রাকুলা' উপন্যাসটিই প্রাচীনকালের ভ্যাম্পায়ারের বিশ্বাস নিয়ে আধুনিক সাহিত্যে প্রবেশ করে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের রহস্যজনক মৃত্যু, নায়িকার রক্তশূন্যতা, ভ্যাম্পায়ারের উৎপাত। উপন্যাসটি একাধিক বর্গে অন্তর্ভুক্ত। ভ্যাম্পায়ার সাহিত্য ভৌতিক কল্পনা সাহিত্য, গথিক উপন্যাস ও আক্রমণ সাহিত্য। গঠনগতভাবে একাধিক চিঠি, দিনলিপি, জাহাজের নথি আকারে রচিত। সাহিত্য সমালোচকরা এ উপন্যাসে ভিক্টোরীয়ান সংস্কৃৃতিতে নারী অবস্থান, রক্ষণশীলতা, যৌনতা, অতিবেশ, সাম্রাজ্যবাদ, উত্তর সাম্রাজ্যবাদ ও লোককথা ইত্যাদির নানান উপাদান পরীক্ষা করে দেখেছে। ব্র্যাম স্টোকার ভ্যাম্পায়ারিজমের আবিষ্কার কর্তা না হলেও একবিংশ শতাব্দীর একাধিক নাট্যকলা, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সংস্করণে ভ্যাম্পায়ারিজমের যে জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার জন্যে এ উপন্যাসখানি বহুলাংশে অবদান রেখেছে। ড্রাকুলা উপন্যাসে ক্লাসিক ভ্যাম্পায়ারের রূপরেখা এঁকেছিল সবচেয়ে স্পষ্ট রূপে। ভ্যাম্পায়ারের আচারণ, স্বভাব, পোশাক পরিচ্ছদ, ক্ষমতা, সরলতা, দুর্বলতা সবকিছুর এক নিখুঁত কাঠামো অাঁকেন। আর স্টোকারের আইডিয়া বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয় ভ্যাম্পায়ারের হলিউড যুগ। তাই বর্তমান সময়ে ভ্যাম্পায়ার হয়ে উঠেছে মূলত যৌনাবেদনময়ী, সম্মোহনী ও আকর্ষণীয়, ইউরোশীয় অঞ্চলের ফুলে ওঠা রক্তচোষা অর্ধগলিত লাশের দুঃস্বপ্ন এখন ভুলে যাওয়ার স্মৃতি। ভ্যাম্প্যায়ার ডায়রী, ট্রু বস্নাড টুই লাইট সিরিজ-এর মতো এই শতাব্দীর ধারণায় ভ্যাম্পায়ারদের চিত্রায়ন করা হয়েছে চিরযৌবনাময় হিরো বা এন্টি হিরো হিসেবে। আর এর মূলে রয়েছে রোমান্টিক যুগের কবি সাহিত্যিক, যাদের লেখায় ভ্যাম্পায়ার এখন রোমান্স ও বিনোদন। গোথে, কীটস, পোলাদ্রি, জেমস ম্যালকম। ঙংংবহঃবষফবৎ এর ঞযব ঠধসঢ়রৎব (১৭৪৮), অঁমঁংঃ ইঁৎমবৎ এর 'খবহড়ৎব', ঝযবষষবু'ং 'ঞযব ঝঢ়বপঃৎধষ ঐড়ৎংবসড়হ' (১৮১০), আধুনিক যুগে ভ্যাম্পায়ারকে রোমান্টিকভাবে চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। ঞযব ঝরীঃয ঝবহংব, ঞযব জরহম, ঞযব এৎঁফমব, গরৎৎড়ৎং, ঝষববঢ়ু ঐড়ষষড়,ি ঞযব ঊীড়ৎপরংঃ, জবপ, চরুুধ যার আবেদন তরুণ সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাই ভ্যাম্পায়ার প্রাচীন সমাজের কুসংস্কার হলেও সাহিত্যবেত্তাদের পরিশ্রম ও গবেষণায় আধুনিক যুগে সাহিত্যে ভ্যাম্পায়ারিজম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।