• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন : স্বীকারোক্তিতে যা জানালো ইরফান

প্রকাশ:  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বহুল আলোচিত চাঁদপুরে হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি-আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান নামের একজনকে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব এ তথ্য জানায়। র‌্যাবের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩শে ডিসেম্বর চাঁদপুরে হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি-আল বাখেরা জাহাজে ৭ জনকে হত্যা ও ১ জনের গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এমভি-আল বাখেরা জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার (২৪শে ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১১ এবং র‌্যাব-৬ এর আভিযানিক দল বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আকাশ মন্ডল (ইরফান) (২৬)কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় আকাশ মন্ডল ইরফানের নিকট থেকে ১টি হ্যান্ড গ্লাভস, ১টি লোটো ব্যাগ, ঘুমের ওষধের খালি পাতা, নিহতদের ব্যবহার হওয়া ৫টি ও গ্রেপ্তার হওয়া আকাশের ব্যবহার করা ২টিসহ মোট ৭টি মোবাইল এবং বিভিন্ন জায়গায় রক্ত মাখানো নীল রংয়ের ১টি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ওই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া আকাশ মন্ডল ইরফান জানায়, সে প্রায় ৮ মাস যাবত এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকুরি করে আসছে। উক্ত জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতো না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতো। জাহাজের মাস্টার সকল কর্মচারীর উপর বিনা কারণে রাগারাগি করতো এবং কারোর উপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতো। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতো না।

এ ব্যাপারে আসামি আকাশ জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। মাস্টারের এহেন কার্যকলাপের দরুণ আকাশের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ১৮ ডিসেম্বর আকাশ ৩ পাতা ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে নিজের কাছে রেখে দেয়। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনায় সে একাই জড়িত বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।

গত ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে ভিকটিমরাসহ আকাশ এমভি-আল বাখেরা জাহাজে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম হতে বাঘাবাড়ি, সিরাজগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আকাশ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে ৩ পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজস্ব কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন।

এরপর রাত আনুমানিক দুইটার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮ থেকে ১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তার হওয়া আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙ্গর করে। পরবর্তীতে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনা মোতাবেক আনুমানিক রাত ৩টার দিকে প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কোড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।পরবর্তীতে সে চিন্তা ভাবনা করে যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধরা পড়বে বিধায় একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে সকল জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে সে নিজে জাহাজ চালাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামক এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়লে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে ট্রলারে উঠে পালিয়ে যায়। সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

এমভি-আল বাখেরা জাহাজে খুন হওয়া সাত ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন, কিবরিয়া (৫৬), সবুজ (২৭), সজীবুল ইসলাম (২৯), মাজেদুল ইসলাম মজিব (১৬), আমিনুর মুন্সি (৪২), সালাউদ্দিন মিয়া (৪১), রানা এবং গুরুতর জখম ব্যক্তি হলেন জুয়েল।