শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ধারণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। স্থানীয় সময় বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন।
এদিনের ব্রিফিংয়ে গুমসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নও উঠেছে। সেখানে হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের সম্পৃক্ততা তদন্তে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ইস্যুতেও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে— তারা সম্ভবত ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজন করবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি জনগণকে তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ দেবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ধারণ এমন একটি বিষয়ে যেদিকে আমাদের অব্যাহত পর্যবেক্ষণ থাকবে। অবশ্যই এই পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে আইনের শাসন, একইভাবে গণতান্ত্রিক মূলনীতির বাস্তবায়নকে আমরা উৎসাহিত করছি। এবাং যেমনটা আমরা সমগ্র বিশ্বে চাই— শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষেই আমাদের অবস্থান।
অপর এক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুম সংশ্লিষ্টতা ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে গুম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। তদন্ত কমিশন গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবিষয় নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, গত দুই দশকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে এমন প্রতিবেদনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জোরপূর্বক গুম একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন যা ভুক্তভোগীদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ট্রমা বা মানসিক যন্ত্রণা দেয়। এটি তাদের পরিবারের ওপর অনিশ্চয়তার ট্রমা সৃষ্টি করে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের এই অপরাধের তদন্তের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করছি।
পরে এক প্রশ্নকারী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন ও তাদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, অবশ্যই এই বিষয়টি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের যে কোনও জায়গায় আমরা প্রথমে নিশ্চিত করতে চাই যে— বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে, সকল মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং মানবিক মর্যাদাকে সম্মান করা হচ্ছে। এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা বিশ্বজুড়ে সকল দেশ ও সরকার এবং অংশীদারদের সাথে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারের সাথেও আমরা তেমনটাই করব।
এছাড়া গত নভেম্বরে জি-৭ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছিল এবং সেখানে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছিল কিনা জানতে চান ওই প্রশ্নকারী।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বলেন, আমাদের অবশ্যই বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। ভারতে আমাদের সমকক্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব রয়েছে। অবশ্যই, এর মধ্যে— নিরাপত্তা সমস্যা, বাণিজ্য সমস্যা, এছাড়া অবশ্যই ভিসাসহ কনস্যুলার সমস্যাও রয়েছে। আমরা জয়শঙ্করের সঙ্গে সেই বৈঠকের কথা আগেই রিড আউটে জানিয়েছি। বাইডেন প্রশাসনে আমাদের সময়কালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অনেকগুলো অভিন্ন ইস্যুর মূল অংশীদার ছিল ভারত এবং বর্তমান প্রশাসনে আমাদের বাকি সময়েও আমরা তাদের সাথে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছি। এর বাইরে বলার মতো আর কোনও বিবরণ আমার কাছে নেই।