মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে ডেঙ্গু আতঙ্ক
চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে এডিস মশার উপদ্রবে যাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে করে এ পথের যাত্রী সংখ্যা দিনদিন কমছে। যার ফলে সরকার প্রতিদিন বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
চাঁদপুরে বুধবার বিকাল পর্যন্ত সরকারি জেনারেল হাসপতালে ৬০ জন নারী, পুরুষ, শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনে দায়িত্বে থাকা টিএক্সআর বিভাগের কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ট্রেনে এডিস মশার উপদ্রব বেড়েছে। এ ছাড়াও ট্রেন ঠিকমত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না। ট্রেনের পরিচারকরা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে তাদের কাছ থেকে যে সেবা পাওয়ায় নিয়ম তা পাচ্ছে না। তারা শুধু ট্রেনের কোন আসন খালি আছে, সেখানে কিভাবে টিকিটবিহীন যাত্রীদের বসিয়ে তাদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করা যায়, সে কাজে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে এ পথের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদাসীনতার কারণে যাত্রী সাধারণ প্রতিদিন তাদের জীবনের নিরাপত্তা হীনতার মধ্যদিয়ে যাতায়ত করছেন।
খোঁজ নিয়ে এবং একাধিক যাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দীর্ঘ বহু বছর যাবত সকাল ৫টায় চাঁদপুর থেকে ছাড়ে আর বিকাল সোয়া ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় চাঁদপুর-চট্টগ্রামে এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর-চট্টগ্রামে যে পরিমান এডিস মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে আবার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী মেঘনা ট্রেনে এডিস মশার উপদ্রবের কারণে অনেক যাত্রী আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এডিস মশার বাস্তব ঘটনার বিষয়টি ট্রেনের একজন পরিচারককে জানালে তিনি বলেন, আসনটি টিস্যু দিয়ে মুছে দেন, আর জানালা খুলে দেন মশা চলে যাবে।
এ ট্রেনের ৫১ থেকে ৫৪ নম্বর আসনগুলো ছিলো দুবাই প্রবাসী চাঁদপুর শহরের উত্তর শ্রীরামদী এলাকার কালু দের পরিবারের সদস্যদের। তার পরিবারের সদস্য ছিল ৫ জন। টিকিট করেছিল ৪টি। এ জন্য টিকিট চেকিংয়ের সময় তাদের শিশু সন্তানের হাফ টিকিটের জন্য ১৫০ টাকা তাদের কাছ থেকে আদায় করেন এ ট্রেনের কর্তব্যরত টিটি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ট্রেনে ডেঙ্গু মশা পাওয়া গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচারক জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে মেঘনা ট্রেনের যাত্রীরা ও সচেতন মহল মনে করেন, চট্টগ্রাম স্টেশন অথবা চাঁদপুর থেকে ট্রেনে এডিস মশা ওঠে। তা নাহলে চলন্ত অবস্থায় বা বিভিন্ন স্টেশনে বিরতির সময় ট্রেনের পাশে যে ঝোপঝাড় বা জঙ্গল আছে, সেখান থেকে এডিস মশা প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ট্রেনের যাত্রীরা।
চট্টগ্রামের স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বলেন, ট্রেনের ভেতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব টিএক্সআরের। যেহেতু শুনেছি ট্রেনে এডিস মশার উপদ্রব, সেহেতু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটা যেহেতু টিএক্সআরের কাজ, তাকে দিয়েই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রেনে এডিস মশার উপদ্রব কর্তৃপক্ষকে কেন জানানো হলো না সে বিষয়ে ট্রেনে কারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেঘনা ট্রেনের দায়িত্বরত পরিচালক (গার্ড) আব্দুল আখের অপু বলেন, ট্রেনের ভেতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ট্রেনে স্প্রে করার দায়িত্ব টিএক্সআরের ও তার অধিনস্থ স্টাফদের। ট্রেনের ভেতর এডিস মশার উপদ্রব দেখা দিলে, তারা প্রয়োজনে মশার ঔষধ স্প্রে করবে।
চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার শোয়েবুল শিকদার বলেন, চাঁদপুরে ট্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য পরিচ্ছন্ন ঘর প্রয়োজন থাকলেও এখানে কোন পরিচ্ছন্ন ঘর নেই। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যেভাবে পরিস্কার করে পাঠানো হয় সেভাবে চাঁদপুরে আসে। এখানে পানি ছাড়া সাধারণভাবে পরিস্কার হয়। তবে ট্রেনে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হয়। এ কাজটির দায়িত্বে রয়েছেন হেড টিএক্সআর ও তার অধিনস্থ স্টাফ। আমাদের না। বিষয়টি জানলাম। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
চাঁদপুরের হেডটিএক্সআর জাকির হোসেন বলেন, চাঁদপুরে ট্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য পরিচ্ছন্ন ঘর নেই। ট্রেনে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব সেটা আমার জানা নেই। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসার পর প্রতিদিন ড্রাই ক্লিন করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন ঝাঁড়ু দেয়া, আসন মোছা, বাথরুম পরিস্কার হয়ে থাকে।