হাজীগঞ্জে জোড়া খুন : রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার ৮
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জের বড়কুল গ্রামে ঘটে যাওয়া নারকীয় জোড়া খুনের কোনো ক্লু গত তিনদিনেও বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের শিকার দম্পতির বড় মেয়ে বীনা রাণী বর্মণ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১০/ ৮/৯/২০২৩ খ্রিঃ। তবে বেশ ক’টি বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্তকাজ চলছে বলে জানিয়েছেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ।
এলাকার বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঠিক কী কারণে একটি বাড়ির খেটে খাওয়া বয়স্ক কেয়ারটেকার দম্পতি খুন হলেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ। শুধু কি চুরির জন্য বিল্ডিংয়ের পেছনের গ্রীল ঘরে ঢুকেছে দুর্বৃত্তরা নাকি ঘরের মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে চুরির নাটক দেখানোর চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তের দল? আবার খেটে খাওয়া কেয়ারটেকারের ঘরে এমন তো কিছু নেই যার জন্য চুরির ঘটনা ঘটবে। স্রেফ চুরির জন্য ঘরে ঢুকলে বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যাই বা করবে কেন? হত্যা করলেও বিবস্ত্র করা হবে কেন স্বামী-স্ত্রীকে? বাড়ির মালিক পক্ষের জমি-জমা নিয়ে কোন ঝামেলার খবর জানা যায়নি, এমনকি যে বাড়িতে এ দম্পতি থাকেন সেই বাড়ির সবাই নিহত পরিবারটিকে সহানুভূতিশীল হিসেবে দেখতেন। নিহত স্বামী-স্ত্রী সবার সাথে ভালোভাবে মিশতেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বড়কুলের সেই বাড়ি পরিদর্শন শেষে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করে জানান, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের হিন্দুদেরকে আতঙ্কে রাখার জন্যে এ হত্যাকাণ্ড। অপর এক নেতা বলেন, বড়কুল গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত কিন্তু ক্রাইম জোন। এতো কিছুর সাথে হয়তো নতুন কোনো রহস্যের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ঘাটন করবে বলে আশা করেন নিহত দম্পতির দুই মেয়েসহ এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণ।
জানা যায়, নিহত দম্পতির মধ্যে স্বামী উত্তম বর্মনের প্রথম স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান রেখে মারা যান। দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে তিনি পরে আবার কাজলী রাণীকে (হত্যার শিকার) বিয়ে করেন। কাজলী রাণীর নিজের গর্ভের কোনো সন্তান ছিলো না। মূলত সৎ মা হয়ে ও উত্তম বর্মনের দুই কন্যা সন্তানকে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন কাজলী রাণী নিজেই। এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অভিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, আমরা তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলতে পারবো না।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রাতের কোনো এক সময় উপজেলার বড়কুল গ্রামের কালা সিতা বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ঘরের পিছনের অংশের জানালার গ্রীল কেটে দুলাল সাহার ঘরে প্রবেশ করে উত্তম চন্দ্র বর্মণ তুফান (৭০) ও তার স্ত্রী কাজলী রানি বর্মণকে (৫৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শুক্রবার ভোরে প্রতিবেশী এক নারী ফুল তুলতে গিয়ে হাত-পা বাধা দম্পত্তির লাশ দেখতে পায়।