• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সনাতনী ধারা বাংলা মাধ্যম বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

প্রকাশ:  ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১৪:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমী ও সিকেডিএফ চাঁদপুর সদর উপজেলার আয়োজনে এবং চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)-এর কারিগরি সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতনী ধারা বাংলা মাধ্যম বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ২৬ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় পূর্ব নির্ধারিত সময়ের কোনো রকম হেরফের না করে যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার কার্যক্রম।
চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শোকাবহ আগস্ট মাসে নিহত শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, শোককে শক্তিতে পরিণত করে আজ আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সুশিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষা জাতি গঠনের মাধ্যম হলে বিতর্ক মানুষ গড়ার হাতিয়ার।
একজন সঠিক মানুষ গড়ে উঠতে হলে একজন ভালো মানের বিতার্কিক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জীবনে পড়ালেখা শেষ করাই কিন্তু শেষ নয়, একজন সঠিক মানুষ গড়ে উঠতে প্রয়োজন হলো নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ভালো মানের বিতার্কিক হওয়া। বর্তমানে টিভিসহ অনেক প্রচারমাধ্যম রয়েছে যেখানে তেমন করে বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন বা প্রচারণা দেখা না গেলেও থেমে নেই বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই কোনো না কোনোভাবে বিতর্কে অংশ নিতে হয়। সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতর্ক হয়ে থাকে। শিক্ষাজীবনে প্রথমেই আমরা যা মানি তা হলো সময়ানুবর্তিতা। এজন্য একজন ভালো মানের শিক্ষার্থী কখনো নিয়মের বাইরে কিছু করতে চায় না। বিতর্ক মানুষকে সময়ানুবর্তিতা শেখায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতা বাগ্মিতা শেখায় অর্থাৎ বাকপটু হতে সহায়তা করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সামনে দাঁড়িয়ে অনেকে কথা বলতে পারে না, পারে না তার ইচ্ছেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। কারণ তার চর্চার অভাব রয়েছে। যদি সে বিতর্ক বা কথা বলার চর্চা করতো তাহলে তার এমন অবস্থার সৃষ্টি হতো না। একজন ভালো মানের বিতার্কিককে প্রচুর পড়ালেখাসহ অনেক কিছু শিখতে হয়। গায়ের জোরে অনেক সময় অনেক কিছু করা না গেলেও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে তা অনেক সহজে সম্পন্ন করা যায়। বিতর্ক প্রতিযোগিতা হলো সঠিকভাবে যুক্তির তথ্য উপস্থাপন করা। বিতর্ক প্রতিযোগিতা করলে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শেখা যায়।
বিতার্কিকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আজ যারা বিতর্ক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে তারাই হয়তো একদিন দেশসেরা বিতার্কিকের মর্যদা লাভ করবে। তিনি আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান সুন্দর-সুশৃঙ্খল আয়োজন করার জন্যে।
চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর অধ্যক্ষ ও পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৩-এর আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সিকেডিএফের সিনিয়র সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমী ও সিকেডিএফের প্রতিষ্ঠাতা রোটাঃ কাজী শাহাদাত।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসান, প্রশিক্ষক সামীম আহমেদ খান, আবৃত্তিকার আফরোজা খাতুন মেরি, সিকেডিএফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ মোঃ উজ্জ্বল হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে, প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা, সিকেডিএফের কর্মকর্তা রোটাঃ মাহমুদা খানম, মুক্তা পীযূষসহ বিতর্ক একাডেমী ও সিকেডিএফের সদস্যবৃন্দ।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমীর উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসান, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের সভাপতি সামীম আহমেদ খান ও খেরুদিয়া দেলোয়ার হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আফরোজা খাতুন মেরি এবং সিকেডিএফ চাঁদপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মাসুদুর রহমান।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি দিয়ে বিকেল ৫.৪৫টায় সম্পন্ন হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ। তিনি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকের এই উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এই যেনো প্রশিক্ষণ কর্মশালা নয়, মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। আসলে আজ যারা এখানে অংশ নিয়েছেন তারা কিছু জানার জন্যে এবং কিছু শেখার জন্যে এসেছেন। আমি তাদের সফলতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই, ভালো কিছু জানতে হলে, ভালো কিছু শিখতে হলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আজ চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ) যে বিতর্ক কার্যক্রম শুরু করেছে তা একদিন সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি আরো বলেন, সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। যারা আজ এখানে অংশ নিয়েছেন তারা বিতর্ককে ভালোবেসেই অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকে থাকতে হলে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে এবং নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হলে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে, প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।
দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক রোটাঃ আলহাজ্ব অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার। সিকেডিএফ ও সিডিএর প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহাদাত ও সিকেডিএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দের যৌথ উপস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। এ সময় প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন তাহসিন ইসলাম বাঁধন, সানজিদা, জিহাদ ও মেহজাবিন ছোঁয়া।
চাঁদপুর জেলার ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে, জানার আগ্রহ আর শেখার প্রবণতা নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরাও ছিলো বেশ উচ্ছ্বসিত। তাদের আগ্রহী মনোভাবে আয়োজকদের মাঝে দেখা দেয় প্রাণোচ্ছ্বাস। তারা প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেন আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে বিতর্ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোঃ আবদুর রহমান গাজী ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন চাঁদপুর কণ্ঠের চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রত্ন পীযূষ, তাসফিয়া ফাহমি ও প্রখর পীযূষের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপর প্রদর্শিত হয় বিগত সালের কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিও দিয়ে উজ্জ্বল হোসাইন কর্তৃক নির্মিত ডকুমেন্টারি।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও মহামারি করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয় এবং ২০২২ পর্যন্ত সেটি আয়োজনের সুযোগ না হওয়ায় এ বছর তা আয়োজন করা হচ্ছে। যেটির ব্যাপ্তি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এ প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রাক-প্রস্তুতিস্বরূপ ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যাতে শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারে নিঃসংকোচে।

সর্বাধিক পঠিত