• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচরে ছেলে হত্যায় মাসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ:  ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচরে ভাড়াটিয়া লোকদের মাধ্যমে নিজের গর্ভজাত সন্তান মোঃ আরিফ হোসেন (২৫)কে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৪৩) ও পরকীয়া প্রেমিক মোঃ জয়নাল গাজী (২৪)কে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামী ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও মাহবুব মোল্লা (২৬)কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
২৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াছমিন এই রায় দেন। রায় প্রচারকালে আসামিরা পলাতক ছিলেন।
হত্যার শিকার আরিফ হোসেন (২৫) হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মাছুম খান বাড়ীর মিজানুর রহমান খানের ছেলে এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুকি বেগমের গর্ভজাত সন্তান। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ জয়নাল গাজী পাশর্^বর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ীর গণি গাজীর ছেলে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলো : ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালী গ্রামের মোল্লা বাড়ীর হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামী জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা ও ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পাশর্^বর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ীর আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তার (১৯)কে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোচ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায়, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মোঃ নূর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
মামলার সরকার পক্ষের আইজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরণ জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্যে এ ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন সময়ে আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামীদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন বিচারক। আসামীদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সকল আসামী অনুপস্থিত ছিলো।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এসডিএলআর অ্যাডঃ মোঃ জয়নাল আবেদীন। অন্যান্য আসামির পক্ষে ছিলেন অ্যাডঃ হান্নান কাজী ও অ্যাডঃ মেরাজ সিদ্দিকী।

সর্বাধিক পঠিত