ফরিদগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল মৃৎশিল্পী স্বামী-স্ত্রীর
পুুকরের পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারালেন মৃৎ শিল্পী অর্জুন পাল (৭০) ও তার তার স্ত্রী অঞ্জলী পাল (৫৫)। ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের আনন্দ পালের বাড়িতে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ভূঁইয়া ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পানি থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
আনন্দ পালের বাড়ির লোকজন জানান, বৃষ্টিজনিত কারণে সোমবার রাতে গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের আনন্দ পালের বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ১৪ আগস্ট সোমবার সকালে তারা দেখতে পায় পুকুরের উপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীবাস পালের মুঠোফোন থেকে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।
নিহত অর্জুন পালের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মিনু পাল জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুকুরের পানিতে মাছ মরে ভাসতে দেখে মৃৎশিল্পী অর্জুন পাল পুকুরের পানিতে নামেন। বেশ কিছুক্ষণ তিনি ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন পুকুরের পাড় গিয়ে তাকে পুুকরের পানিতে পড়ে থাকতে দেখে। তাকে উদ্ধার করতে তার স্ত্রী অঞ্জলী পাল পুকুরের পানিতে নামলে তিনিও পানিতে তলিয়ে যান। এ সময় তারা নিশ্চিত হন বিদ্যুতের তারের কারণে পানি বিদ্যুতায়িত হওয়ায় উভয়ই মারা গেছেন। ফলে আর কাউকেই তারা পুকুরে নামতে দেন নি।
নিহত অর্জুন পালের ভাইপো অমৃত পাল হৃদয় জানান, মৃত দুজন আমার কাকা ও কাকিমা। অর্জুন পালের দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের উভয়কেই বিয়ে দিয়েছেন কুমিল্লার লাকসামে ও চান্দিনায়।
স্থানীয়রা জানান, পল্লী বিদ্যুতের এই লাইনটি পার্শ^বর্তী হাইমচর উপজেলা থেকে এসেছে। সকালে নিহত অর্জুন পালের ভাইয়ের মুঠোফোন থেকে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে তাদের গাফলতির কারণে দুজনের করুণ মৃত্যু হলো।
ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন জানান, দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে তিনি এই মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারেন। দ্রুত তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি থেকে উভয়ের মরদেহ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মোঃ মোরশেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল জানান, পুুকুর থেকে মাছ তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এর আগেই ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ মরদেহ উদ্ধার করে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনন্দ পালের বাড়ির দক্ষিণ দিকের পুকুরের দক্ষিণ কোণে বিদ্যুতের পিলার থেকে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পুকুরের পানিতে পড়ে রয়েছে। পুকুর পাড়ে ছোট মাছ এবং কয়েকটি বড় মাছ মরে ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানায়, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফোন দিয়ে পুকুরের পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে বিষয়টি জানানো হয়। অর্জুন পাল পুকুরের পানিতে মাছ ভেসে থাকতে দেখেন। বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করা হয়েছে এমনটি ভেবে তিনি পানিতে নামলে বিদ্যুতায়িত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপরই তার স্ত্রী তাকে খুঁজতে গিয়ে পানি থেকে উদ্ধারের জন্যে নামলে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। উভয়ই ঘটনাস্থলেই মত্যুবরণ করেন।