• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচরে কাজ না করেই কাবিখার লাখ লাখ টাকা লোপাট!

প্রকাশ:  ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচর উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নের নামে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে টিআর (টেস্ট রিলিফ), কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) ও কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) কর্মসূচির আওতায় ১ম পর্যায়ে নগদ অর্থ/খাদ্যশস্য (চাল ও গম) কাজ না করেই আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)-এর সাথে যোগাসাজশ করে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির লোকজন ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা ও খাদ্যশস্য তুলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জনিয়েছেন।
অনিয়মের বিষয়টা অস্বীকার করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মাসুদুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্যে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোহাইলা চৌধুরীরকে জানালে তিনি বলেন, আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
হাইমচর উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সাধারণ ও বিশেষ কোটায় ১ম কিস্তিতে কাবিখা প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকার ৪৪.০০০ মেট্রিক টন চাল, ২৭.৯৪৪ মেট্রিক গম, নগদ অর্থের ১০টি চেক, চাল ৬টি এবং ৩টি কাবিটা প্রকল্পের অনুকূলে ২৬ লাখ টাকা এবং টিআর প্রকল্পের অনুকূলে ৪ লাখ ৭ হাজার ৬৬৬ টাকা বরাদ্দকৃত দেওয়া হয়। ১৫/০৩/২০২২ খ্রিঃ-এর মধ্যে কাজ শতভাগ শেষ করার সরকারি নির্দেশ ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাগজ কলমে শতভাগ কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
প্রকল্প অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ২নং আলগী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডে মীর বাড়ি রাস্তা হইতে সোনাগাজী বাড়ি হয়ে শাহ আলম মিয়াজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ না করে কাজ দেখিয়ে কাবিখা প্রকল্পে প্রথম কিস্তিতে বরাদ্দ দেয়া ৮ টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সোনা গাজী জানান, আমাদের এই রাস্তায় গত ২ বছরেও কেউ কোনো কাজ করে নাই । আমার নামে রাস্তার কাজ আসছে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে, কিন্তু আমি দেখলাম না আজ পযর্ন্ত কোনো কাজ করতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের এই উন্নয়ন কাজ না করে যারা টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।
উপজেলার ৩নং দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের চরভাঙ্গা ৯নং ওয়ার্ড সৈয়দ পাটোয়ারীর বাড়ি হতে ৭নং ওয়ার্ড সাহাদাত মাওলানার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্দ কাবিখা প্রকল্পের ৮টন চাল উত্তোলন করে রাস্তার কোনো কাজ করা  হয়নি বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। আসানুল্লাহ রাড়ী জানান, আমাদের এই রাস্তাটি বর্ষাকালে বেহাল দশা হয়ে থাকে। তাই আমরা এলাকাবাসীরা নিজের টাকা দিয়ে এই রাস্তাটি কিছু সংস্কার করেছি। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি অফিস এবং চাঁদপুর ডিসি বরাবর দরখাস্ত প্রেরণ করি এ রাস্তাটির জন্য। এ রাস্তাটিতে কোনোদিনও সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়নি। তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই এই রাস্তাটি যেনো দ্রুত নির্মাণ করে দেয়া হয়। সেই সাথে বরাদ্দের সব টাকা যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের শাস্তি দাবি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা বলে সকল বিলে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। যেহেতু সেই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, আমি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।