তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব : জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেছেন, তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকলকে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে। গতকাল ১৪ নভেম্বর সোমবার চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি, চাঁদপুর কর্তৃক আয়োজিত তথ্য মেলার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনব্যাপী উক্ত তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হলেও এখনো অনেকেই এ আইন সম্পর্কে তেমন জানেন না। এখন সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশ করছে। আর সরকারি যেকোন দপ্তরের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এখন যেকোন তথ্য পেতে একটি হটলাইন নম্বরও চালু করেছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি রুখতে হলে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। কোনো সেবা পেতে হলে সেবা দাতাদের পাশাপাশি সেবাগ্রহীতাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনের মাধ্যমে কীভাবে সেবা পাওয়া যায় সেই প্রক্রিয়াও সাধারণ জনগণকে জানতে হবে। জেলা প্রশাসক প্রতিটি দপ্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং শুদ্ধাচার চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মিথ্যা ও দুর্নীতি এ দুটি শব্দ আমাদেরর ডিকশনারী থেকে বাদ দিতে হবে। তিনি মেলায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মিথ্যা না বলার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন এবং এমন একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।  

সনাক চাঁদপুরের সভাপতি শাহানারা বেগমের সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি ডাঃ পীযুষ কান্তি বড়–য়ার সঞ্চালনায় মেলায় বিশেষ অতিথি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একটি দেশ চেয়েছিলেন যেদেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। বিভিন্ন দপ্তরে সেবা পেতে হলে তথ্যই আনেক বড় একটা শক্তি। সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য অধিকার আইন পৌঁছাতে পারলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন। মেলায় তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন সনাকের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, তথ্য মেলার প্রাসঙ্গিকতা ও এই মেলা থেকে সনাক-টিআইবির প্রত্যাশা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টিআইবির কো-অর্ডিনেটর কাজী শফিকুর রহমান, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকারের ভূমিকা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য ইসমত আরা সাফী বন্যা এবং তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে ইয়েস গ্রুপের প্রত্যাশা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ইয়েসের দলনেতা পূজা রাণী সরদার।

তথ্যমেলায় ইয়েস গ্রুপের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিবিরোধী কুইজ প্রতিযোগিতা, সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা, ইয়েস গ্রুপের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় চিত্রাঙ্কন ও দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা, সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননী সংলাপ, সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতা : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বিষয়ক আলোচনা, সরকারি পরিষেবা বিষয়ক সেবা সংলাপ, সনাক-চাঁদপুরের ইয়েস গ্রুপের পরিবেশনায় জারিগান, সান্ধ্যকালীন আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়। সবশেষে আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তনের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তথ্য মেলার সফল সমাপ্তি হয়। এছাড়াও তথ্য মেলায় দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষরের আয়োজন করা হয়। 

মেলার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ সাজেদা পলিন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে। এ সময় আলোচনার ওপর শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং কুইজে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। মেলায় সনাকের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সনাক সদস্য ইসমত আরা সাফি বন্যার পরিচালনায় উক্ত সংলাপে অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোসাম্মৎ রাশেদা আক্তার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অঃ দাঃ) নাছিমা আক্তার, টেকনিক্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আলেয়া ফেরদৌসী, বলাখাল জে.এন. উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খোদেজা বেগম, খেরুদিয়া কলেজের  অধ্যক্ষ আফরোজা খাতুন মেরী, উত্তর তরপুরচন্ডী কাজীপাড়া সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম, গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান অতিথি হাছিনা আক্তার, চাঁদপুর সেন্ট্রাল ইনার হুইল ক্লাবের সভাপতি মাহমুদা খানম, পদক্ষেপ বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুক্তা পীযূষ ও ওয়াইডাব্লিউসিএ চাঁদপুরের সাধারণ সম্পাদক পাপড়ী বর্মণ।

স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতার সম্পর্ক বিষয়ক সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতা : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ, চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ সাজেদা পলিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাঁদপুর সদর মোঃ হেদায়েত উল্যাহ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) মোঃ শরিফুল ইসলাম। 

সেবা গ্রহীতা হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের বিভাগীয় প্রধান (হিসাব বিজ্ঞান) মোঃ হাবীবুর রহমান পাটওয়ারী, সিসিডিএফ চাঁদপুরের সাবেক সভাপতি ভিভিয়ান ঘোষ, বাবুরহাট হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মোঃ মাসুদুর রহমান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রাবেয়া আক্তার ও সিসিডিএফ চাঁদপুরের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকা ইসলাম।

সরকারি পরিষেবা বিষয়ক সেবা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ, সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) মোঃ শরিফুল ইসলাম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাঁদপুর সদর মোঃ হেদায়েত উল্যাহ্, চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম ভূঁইয়া।

মেলায় ইয়েস গ্রুপের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিবিরোধী কুইজ, চিত্রাঙ্কন ও দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় চাঁদপুরের ৫টি কলেজ ও ৯টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর ও দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ইয়েস গ্রুপের পরিবেশনায় দুর্নীতিবিরোধী জারিগান অনুষ্ঠিত হয়। মেলার সমাপনী পর্বে আনন্দধ্বনি সংগীত শিক্ষায়তন মনোজ্ঞ গণসংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

দিনব্যাপী এ তথ্য মেলায় চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী ৩১টি প্রতিষ্ঠান তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী জনগণকে তথ্য প্রাপ্তির কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সরকারি বেসরকারি কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে তথ্য পেতে পারেন সেজন্য তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরম পূরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়। সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয় রাত ১০টায়। এবারের মেলায় ৩১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টল দিয়ে তথ্যসেবা প্রদান করে।