জেলা বাসদের জনসভায় কমরেড নিখিল দাস সরকার
গরিবের কথা ভাবছে না, ভাবছে পুঁজিবাদীদের কথা
ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রুখো, শ্রেণি সংগ্রাম বেগবান করো, মেহনতী মানুষের রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করো এবং দুনিয়ার মজদুর এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা শহরস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে রুশ বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস।
তিনি বলেন, সরকার গরিব মানুষের কথা ভাবছে না, ভাবছে পুঁজিবাদীদের কথা। আজ তেল, ডাল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে, নেই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা, আমদানিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, গুটি কয়েক আমদানিকারকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে সরকার। তারা আমদানির নামে কোটিপতি হচ্ছেন সরকারের ছত্র-ছায়ায়। করোনাকালীন সময় এদেশে কোটিপতির সংখ্যা যেমন বেড়েছে বর্তমান সময়ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। আর একের পর এক দরিদ্রসীমায় উপনীত হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে এদেশের গরিব খেটে খাওয়া মানুষ। অথচ সরকারের সেদিকে কোনো নজর নেই। যে সরকার কিছুদিন আগেও বলেছিল আমার দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে যাচ্ছি। অথচ এখন নাকি ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছে না আমদানিকারকরা, ব্যাংকে নাকি ডলার সংকট। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার নেই। কোথায় গেল আমাদের রেমিট্যান্স। সরকারের সবই ভাঁওতাবাজি, ভাঁওতাবাজি করে দেশ চালানো যায় না, দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করা যায়। আমরা বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সকল সময় গরিব মেহনতী মানুষের কথা বলে আসছি। আগামীতে এ দলটি মানুষের অধিকার আদায়ে মানুষের পাশে থাকবে, মানুষের হয়ে কথা বলবে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছিলাম। যে রাষ্ট্র গঠনে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ জীবন দিয়েছে, অথচ সেই স্বাধীন দেশে এখনো সকল মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান সরকার একটার পর একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে গণমানুষের বিপক্ষে, অথচ তা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। প্রতিবাদ করা যাবে না, যদি তা করা হয় তাহলে ডিজিটাল আইনে আপনার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, করা হবে নির্যাতন, নিপীড়ন। তাই মানুষ ভয়ে কথা বলছে না। পত্র-পত্রিকাগুলো সত্য লিখতে পারছে না। টিভি চ্যানেলগুলো সত্য প্রকাশ করতে পারে না। আজ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার হারিয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কালাকানুন। সরকার আজ দরিদ্র শ্রেণীর পাশে না দাঁড়িয়ে পুঁজিবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। গুটিকয়েক আমদানিকারকের কাছে সরকার দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদেশে যদি তেল, ডাল, চিনির মূল্য বৃদ্ধি পায় ১ গুণ, দেশে তা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। কারণ, মন্ত্রী-এমপি অনেকেই এখন ব্যবসায়ী। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। সরকার বলছে আমাদের খাদ্য, তেল, গ্যাসসহ কোনো কিছুর অভাব নেই। দেশে এতো বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে, যা আমাদেরকে বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি খাম্বা স্থাপন করেছে আর বর্তমান সরকার একটার পর একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে, কিন্তু বিদ্যুৎ সঞ্চালন করেনি। এসকল অনিয়ম মিথ্যাচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি গরিব-মেহনতি মানুষের কল্যাণ এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। আহ্বান জানান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার।
জেলা বাসদের সমন্বয়ক কমরেড শাহজাহান তালুকদারের সভাপতিত্বে ও জেলা বাসদ নেতা নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্য নেতৃবৃন্দের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি দিপালী রাণী দাস, কচুয়ার বাসদ নেতা কমরেড জয়দেব কর্মকার, ফরিদগঞ্জ বাসদ নেতা কমরেড হারুনুর রশিদ, কমরেড মুখলেছুর রহমান প্রমুখ।