দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের নিরাপদ রূট এখন চাঁদপুর
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের প্রধান রূট এখন চাঁদপুর। সাম্প্রতিকালে পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে মাদকসহ পাচারকারীদের আটকের ঘটনায় এমনটি বোঝা যাচ্ছে। পুলিশ, ডিবি পুলিশ সড়কপথে বেশ ক’টি মাদকের চালান আটকের পর মাদক কারবারীরা এখন ডাকাতিয়া নদী ও হরিণা ফেরি রূট ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে অরক্ষিত হয়ে আছে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ।
জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে মাদক চলে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এ সকল মাদকের চালান সাধারণত তিন রূটে বহন করে এখানকার মাদক কারবারীরা। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ, র্যাব, ডিবি পুলিশ প্রায়ই অভিযান চালায়। এ ক্ষেত্রে মাদক কারবারীরা চাঁদপুর শহরের দক্ষিণে হরিণা ফেরি রূট ও ডাকাতিয়া নদীকে ব্যবহার করছে। এছাড়া চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে লোকাল ট্রেন না থাকলেও সাগরিকা এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস চলাচল করছে। জনবল সঙ্কটে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে পাঁচটি রেল স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘবছর। তাছাড়া এই রূটের রেলপথে তীব্র জনবল সঙ্কট রয়েছে। যে কারণে উক্ত রেলপথ অনেকটা অরক্ষিত হয়ে আছে। ভৌগোলিক কারণে কুমিল্লা বা চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে কোনো কিছু পরিবহন করতে হলে ফরিদগঞ্জ হয়ে হাইমচর কিংবা চাঁদপুর সদরের হরিণা ফেরিঘাট কিংবা হাজীগঞ্জকে রূট হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। হাজীগঞ্জ থেকে নদীপথ, রেলপথ কিংবা সড়কপথে চাঁদপুরে যাওয়া একেবারে সহজ হওয়ায় মাদক কারবারীরা সহজে এ পথগুলো ব্যবহার করছে। বিশেষ করে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক বরাবর নিরাপদ বিধায় তারা এ রূটকে সবসময় মাদক পাচারের রূট হিসেবে বেছে নেয়। সম্প্রতি উক্ত রূটে বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে একের পর চালান আটকের পর মাদক কারবারিরা ডাকাতিয়া নদী তথা নৌ-পথকে বেছে নেয়।
অন্যদিকে চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা ইউনিয়ন হয়ে হরিণা ফেরিঘাটকে মাদক ও চোরা কারবারীদের নিরাপদ রূট বললে ভুল হবে না। এই ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহনে করে সড়ক পথে এবং ট্রলার কিংবা স্পীডবোটযোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাদক পাচার হচ্ছে। চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাটটি মাদক ও চোরাচালানের বিরাট ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চান্দ্রা বাজার, আখনের হাট, মদনায় এখন মাদক কেনা-বেচার হাট বসে। কক্সবাজার-টেকনাফ ও কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা থেকে অতি সহজে বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদপুরে আসছে মাদক ও বিভিন্ন পণ্যের চালান। বিশেষ করে চাঁদপুর-শরিয়তপুর ফেরি রূটে বহু যানবাহন চলাচল করে থাকে। মাদক ব্যবসায়ীরা এই রূটের হরিণা ফেরি ঘাটকে অনেকটা নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে। আর এখান থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মাদক পাচার করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ী চক্রটি। মাদক ও অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ইতিপূর্বে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে এরা কৌশল পরিবর্তন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদক পাচার ও ব্যবসা করে যাচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ও হানারচর ইউনিয়ন দুটি মাদক ব্যবসার প্রধান স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। প্রতিদিন ওই এলাকা মাদকের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পদচারণায় জমজমাট থাকে। সন্ধ্যার পর চান্দ্রা বাজার এলাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারীদের সক্রিয় পদচারণা লক্ষ্য করা যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে চান্দ্রা এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ ক’জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকও করেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবসা।
দেখা যায়, চান্দ্রা বাজার ও বিভিন্ন সড়কের পাশে হকাররা দাঁড়িয়ে থেকে বহিরাগত মাদকাসক্তদের কাছে ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি করে করে থাকে। বর্তমানে চাঁদপুর-শরীয়তপুর রূটের হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট দিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে স্থানীয় একটি চক্র কৌশলে দেশের নানা স্থানে ইয়াবাসহ চোরাই পণ্য পাচার করে আসছে। হরিণা ফেরিঘাটে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করার দাবি দীর্ঘ দেড় যুগেও বাস্তবায়িত না হওয়ায় এখানে চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। মাদক ব্যবসা নিয়ে চান্দ্রা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জাহান আলী কালু পাটোয়ারী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে অপারগতা জানান। জানা যায়, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে এই ইউপি চেয়ারম্যানকে অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের চাঁদপুর সীমানায় যে ক’টি গাঁজার চালান আটক করা হয়েছে তার মধ্যে সকল মাদক পরিবহন কিংবা মাদক কারবারীর বাড়ি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের প্রধান রূট এখন চাঁদপুর।
এসব বিষয়ে কথা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দীনের সাথে। তিনি জানান, চাঁদপুরের যেসব পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকে সেসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। প্রতিনিয়ত ধরাও পড়ছে। আসলে যারা এসব কাজ করে তারা দিন দিন তাদের মাদক পাচারের কৌশল পরিবর্তন করে থাকে।