• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : চাঁদপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ॥ লঞ্চ চলাচল বন্ধ

আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতসহ জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ

প্রকাশ:  ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১০:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপটি ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে। বারংবার গতিপথ পরিবর্তন করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আজ মঙ্গলবার ভোরে আঘাত হানতে পারে। উপকূলীয় জেলাগুলো উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২৪ অক্টোবর ভোররাত থেকেই চাঁদপুরসহ সারাদেশে অবিরাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর সঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। এ পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে। চাঁদপুর নদী বন্দর এলাকাকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হলেও উপকূলীয় জেলাগুলোর সঙ্গে চাঁদপুর ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঢাকা সদরঘাট থেকে চাঁদপুর, চাঁদপুর থেকে ঢাকা, বরিশালসহ সব রুটের লঞ্চ এবং সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ  ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সকাল পৌনে ১১টার পর চাঁদপুর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকা থেকেও লঞ্চ ছাড়েনি বলে জানান চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দরুণ চাঁদপুরের চরাঞ্চলের মানুষদের এবং নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান গতকাল সকালে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানেই তিনি চাঁদপুর জেলাকে ৭ নাম্বার বিপদ সংকেতের আওতায় রাখার বিষয়টি জানান দেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চাঁদপুর জেলার চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। চাঁদপুর জেলার সকল জেলেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। জেলা প্রশাসকের এই জরুরি বিজ্ঞপ্তি মাইকিং করা হয়। 
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। 
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘সিত্রাং’র প্রভাবে চাঁদপুরে সোমবার সকাল থেকে দিনভর প্রবল বৃষ্টি চলছে। মাঝে মধ্যে দমকা বাতাসও বইছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। প্রত্যেকটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্যে। জেলার মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১২১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি শুকনো খাবারসহ জরুরি পণ্য মজুদ রেখেছে। ‘সিত্রাং’ মোকাবিলায় চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব চরাঞ্চলের পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্যে  আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করাসহ জেলার চরাঞ্চলসহ নদী বন্দর এলাকায় মাইকিং ও আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে। রোববার দিবাগত মধ্য রাত থেকে চাঁদপুরের বহু অঞ্চলে ১২/১৩ ঘন্টা একটানা বিদ্যুৎ ছিল না। এছাড়া পুরো শহরে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল।
চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, চাঁদপুর নদীবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সিত্রাং মোকাবেলায় চাঁদপুর নদী বন্দর এলাকায় একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমন্বয় করবেন। অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আজকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতিতে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে এবং সকাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়্যারলেস সুপারভাইজার মোঃ সোয়েব জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চাঁদপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫.৬। আপাতত ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত অব্যাহত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিয়মিত তথ্য নিচ্ছেন এবং জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রেস সচিব জানান, শেখ হাসিনা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে আইন প্রণেতাসহ তার দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন এবং ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও (পিএমও) ২৪ ঘণ্টার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ পর্যবেক্ষণ সেল চালু করা হয়েছে।
সবাইকে এই সেল-এর হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নম্বরগুলো হলো : ০১৭৬৯-০১০৯৮৬, ০২-৫৫০২৯৫৫০ ও ০২-৫৮১৫৩০২২। ফ্যাক্স নম্বর ০২-৯১০২৪৬৯

সর্বাধিক পঠিত