চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলায় চলাচলের পথ বন্ধ
দুটি পরিবারসহ ২৪ জনের নিদারুণ ভোগান্তি
চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা এলাকার কু-ুবাড়ি সংলগ্ন দুটি পরিবারসহ ২৪জন মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় বহু বছর যাবত তাদের নিদারুণ ভোগান্তির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। নিরীহ দুটি পরিবারের চলাচলের জন্য রাস্তা কাগজপত্রে লেখা থাকলেও বাস্তবে তা ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না প্রতিবেশী প্রভাবশালী লোকেরা। ওই দুই পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েন। সামাজিকতা রক্ষা করাও তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে সমাধান পাওয়ার লক্ষ্যে জানানো হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা শুধুমাত্র চলাচলের জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন পরিবার ২টিসহ ২৪জন ভুক্তভোগী মানুষ।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কু-ুবাড়ির মন্দিরের উত্তর পাশে ড্রেনের উপর দিয়ে ওই দু’টি পরিবারের লোকজন ভাড়াটিয়াসহ ২৪জন মানুষ মারাত্মক কষ্ট শিকার করে চলাচল করে যাচ্ছেন। পরিবার দু’টি হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম বেপারী ও হাজী আবদুল মতিন গাজীর পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুর রহিম বেপারী গুয়াখোলার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে ১৯৯৭ সালে সম্পত্তি ক্রয় করে বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরি করেন এবং হাজী আবদুল মতিন ১৯৯১ সালে একই এলাকার বাসিন্দা শ্রী সম্ভু নাথ সরকারের কাছ থেকে সম্পত্তি ক্রয় করে পাশাপাশি দুটি পরিবার বসবাস করে আসছেন। তাদের উভয়ের দলিলে ইজমালি চলাচলের রাস্তার কথা খরিদকৃত দলিলের চৌহদ্দিতে উল্লেখ থাকলেও বর্তমান চিত্র উল্টো। ওই এলাকার প্রত্যেক পরিবারের চলাচলের রাস্তা থাকলেও এই দুই পরিবার এখন কোণঠাসা (তারা যেন এখানে সংখ্যালঘু) হয়ে রয়েছে। তাদের দুই পরিবারের বাড়ির সামনে সরু রাস্তা। কিন্তু রাস্তার পশ্চিমে একজনের বসতঘর এবং পূর্বে দেয়াল দিয়ে আরেকজন বন্ধ করে রেখেছেন। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম ঘরের কিছুটা পাশ দিয়ে ভেঙ্গে রাস্তা দেয়া অথবা পূর্বের দেয়াল অপসরাণ করে চলাচল করার সুযোগ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেয়া সম্ভব বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
আবদুর রহিম বেপারীর ছেলে মোঃ অহিদুর রহমান জানান, আমরা যখন এখানে বসবাস শুরু করি তখন চলাচলের রাস্তা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রভাবশালী লোকজন আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কর্মসংস্থানের কারণে ঢাকায় থাকি। বাসায় আমার মা, ছোট বোন, দুই ভাই ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন। আমাদের পাশে আরেক পরিবারও থাকে। আমাদের এই দুই পরিবার কীভাবে থাকি তা বাস্তবে কেউ এসে না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার মা কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু রাতের বেলায় ড্রেনের উপর দিয়ে চিকিৎসক যাওয়ার জন্য রাজি হননি। আমার বোন বিয়ে দেয়ার উপযুক্ত হয়েছে। রাস্তা না থাকায় মেহমান প্রবেশ করার সেই সামাজিকতাও রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
অহিদুর রহমান আরো জানান, আমাদের পরিবার ও পার্শ্ববর্তী হাজী আবদুল মতিন গাজী সাহেবের পরিবার খুবই নিরীহ। আমরা আমাদের প্রতিবেশী কারো সাথে কোনোভাবে বিবাদে যেতে চাই না। এখানে শুধুমাত্র মানবিক বিষয়টি জাগ্রত হওয়া দরকার। কারণ বহু বছর এই এলাকায় আমরা সব ধর্মের লোকজন অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করে আসছি। আমি শুধুমাত্র আমাদের ন্যূনতম চলাচলের রাস্তার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র, আমাদের স্থানীয় কাউন্সিলর এবং প্রশাসনের দৃষ্টি একান্তভাবে কামনা করছি। বিশেষ করে পৌরসভার মেয়র এবং স্থানীয় কাউন্সিলর মহোদয় প্রতিবেশীদের সাথে আলাপ-আলোচনা যদি করেন, তাহলে আমাদের দীর্ঘদিনের চলাচলের বন্ধ রাস্তাটির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে করে মানবিকতা প্রাধান্য পাবে এবং মানুষ-মানুষের জন্য ধর্মীয় যে কথাটির প্রচলন রয়েছে তা’ বাস্তবে তার রূপ পাবে। এলাকাবাসীরও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, দীর্ঘদিনের এ মানবিক বিষয়টি সরজমিনে দেখে সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে আসাটা একান্ত প্রয়োজন।