• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জে সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কে ৫২ বাঁক

মোড়ে মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার যাত্রী ও সাধারণ মানুষ

প্রকাশ:  ২০ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাঁক রয়েছে ৫২টি। তন্মধ্যে অতিবাঁক রয়েছে কমপক্ষে ৩০টি। এ সকল অতি বাঁকের কারণে প্রায় দিন ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘন ঘন বাঁকের কারণে সড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাই যাত্রীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এলজিইডি নির্মিত সড়কের উক্ত অংশের সব বাঁক সোজা করা সম্ভব না হলেও অন্তত অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সোজা করে দিলে দুর্ঘটনা এড়ানোসহ সড়কে যান ও যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে সম্প্রতি সড়কটির প্রশস্তকরণ ও নতুন কিছু সেতু তৈরি করার প্রস্তাবনা অনুমোদন পেলেও বাঁক সরলিকরণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও সরলিকরণের জন্যে নতুন করে প্রস্তাবনার কথা বলছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ রেজওয়ানুর রহমান।
সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের দেবপুর-রাজারগাঁও-চেঙ্গাতলী-নারায়ণপুর-মতলব-গৌরিপুর সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ অংশের দেবপুর হতে রাজারগাঁও সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিদ্যমান ৫২টি বাঁকের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বা অতি বাঁক রয়েছে কমপক্ষে ৩০টি।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, পাকা সড়কটি চওড়ায় ১২ ফুট, শোল্ডার (কাঁধ) মিলিয়ে চওড়ায় মোট ১৮ ফুট। সড়কটি পাশে ১৮ ফুট পাকাকরণ ও শোল্ডারসহ ২৪ ফুট চওড়াকরণ এবং ৭টি নতুন বক্স ব্রিজ তৈরি করতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রস্তাবনাটি পরে অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু বাঁক সরলিকরণের জন্যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় শত বছর পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয়দের চলাচলের জন্যে এলাকাভিত্তিক মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়। সেই মাটির রাস্তাটি ধীরে ধীরে প্রশস্তকরণসহ তিন উপজেলার (হাজীগঞ্জ-মতলব-গৌরিপুর) সংযোগ সড়কে রূপ নেয়। এক সময় মানুষের চলাচল বেড়ে গেলে সড়কটিতে বেবি-ট্যাক্সি চলাচল শুরু হয়। স্বাধীনতার পর যাত্রী চলাচলের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সরকারিভাবে রাস্তাটি আরো প্রশস্তকরণসহ পাকা করা হয়। ফলে এটি পরিপূর্ণ সড়ক হিসেবে রূপ লাভ করে। সড়ক সৃষ্টির শুরুর দিকের বাঁকগুলো যথাস্থানে রেখে যুগ যুগ ধরে সড়কটি সংস্কার, প্রশস্ত ও পাকাকরণ হয়েছে। একসময় সড়কটির মালিকানা এলজিইডি লাভ করে। সড়কটির দু পাশে বনায়ন রয়েছে। বর্তমানে উক্ত সড়ক ধরে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচলসহ সহ¯্রাধিক যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক চলাচল করে। স্কুল-কলেজের শত শত শিক্ষার্থীর চলাচল ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল আনা-নেয়া হয় এ সড়ক ব্যবহার করে।
উক্ত সড়কে প্রায় এক যুগ ধরে সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছেন দেবপুর এলাকার ইমাম হোসেন। তিনি জানান, এ সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রায় দিন দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনার কারণে কতো মানুষ পঙ্গু হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। আমরা চাই, সড়কটির বেশি বাঁকগুলো সোজা করা হোক।
আরেক চালক স্থানীয় চতন্তর গ্রামের শামীম আহমেদ জানান, গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো এমন আশা করি না। রিজিকের কারণে এ সড়কে গাড়ি চালাই। কিছু কিছু দুর্ঘটনা দেখলে মন চায় এ সড়ক থেকে চলে যাই।
সড়কের পাশের গ্রাম রাজারগাঁও এলাকার কাজী বাড়ির নূর নবী (৫২) জানান, রাস্তায় বেশি বাঁকের কারণে প্রায় দিন দুর্ঘটনা ঘটে। এ সকল দুর্ঘটনার শিকার নারী-শিশুদেরকে দেখলে খারাপ লাগে। বাঁকগুলো সোজা না করলে প্রতিদিনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ রেজওয়ানুর রহমান জানান, সড়কটি প্রশস্তকরণ ও ৭টি নতুন ব্রিজের জন্যে আমরা চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রস্তাবনা পাঠাই। সম্প্রতি তা পাস হয়েছে। এখন টেন্ডারে যাবে। তবে বাঁকগুলো সোজাকরণে বড় ঝামেলা ভূমি অধিগ্রহণ। সড়কের পাশের ভূমির যে দাম, অধিগ্রহণ ছাড়া কাজ করা মোটেই সম্ভব নয়। অতি বাঁকগুলোর সরলিকরণের জন্যে নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত