• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবাধে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি

প্রকাশ:  ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 আধুনিকতার ছোঁয়ায় নাগরিক জীবনে ক্রমাগত বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এসব চাহিদা মেটাতে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়েও বেড়ে চলেছে গ্যাসের ব্যবহার। হাইমচর উপজেলাজুড়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে ব্যবসা করে গেলেও নীরব রয়েছে প্রশাসন। অদৃশ্য এ নীরবতাকে পুঁজি করে ফুটপাতে এমনকি গ্রামের চায়ের দোকান, মুদি, ইলেকট্রনিক্স, ফার্মেসীর দোকানেও বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা। যেসব স্থানে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা চলছে সেসব স্থানে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের পথেঘাটে যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান মালিক কোনো বিধি-নিষেধ মানছে না। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন বা পরামর্শ ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সের ভরসায় ব্যবসা করে চলছেন অনেক ব্যবসায়ী। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার-গ্রামগুলোতে অবাধে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। আবার এসব ব্যবসায়ীর কাছে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়ে যায়। উপজেলা সদর আলগী বাজারের দোকানের পাশে থাকা খোলামেলা ফুটপাতে খালি বোতল ও মজুদ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নেই কোনো লাইসেন্স তথা অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র।
উল্লেখ্য, হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী লঞ্চঘাটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছাড়পত্র ছাড়াই খোলামেলা গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল, ডিজেল বিক্রি করা, নিয়ম না মেনে গ্যাসের ব্যবহারে দুর্ঘটনার মতো দৃশ্যপট দেখার আগেই ব্যবসায়ীদের সচেতন হওয়া জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন সচেতন মহল।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র যে লাগে তা আমার জানা নেই। প্রয়োজন হলে আমরাও নিবো। চায়ের দোকানেও এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মিলছে। মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেও বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। শুধু তা-ই নয়, ঔষধ, সিমেন্ট, কসমেটিক্স এমনকি লাইব্রেরিসহ ফুটপাতের ছোটখাটো দোকানে অবাধে মিলছে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। তাই আমিও এভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
গ্যাস ব্যবহারকারী এক চা দোকানদার বলেন, গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার আমরা করতে পারি না। বাজারে আমরা যেটা পাই সেটাই নিয়ে আসি। এগুলোর ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুই বুঝি না।
আলগী বাজার এজেন্টদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সাথে সমন্বয় করে বিভাগীয় পর্যায়ে বিস্ফোরক দপ্তর থেকে ছাড়পত্র এনেছি। সে অনুযায়ী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি । সুনির্দিষ্ট ছাড়পত্র দেখাতে পারবো না বলে জানায় অনেক ডিলার।
যে কোনো দোকানে ১০টির ঊর্ধ্বে গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ১০টির ঊর্ধ্বে গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও কোনো অনুমোদন নেননি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী কেউ। এই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রত্যেক জায়গায় চায়ের দোকানগুলোতে বসলেই দেখা যায় গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার। উক্ত চায়ের দোকানগুলোতে বেশিরভাগ সিলিন্ডার রাখা হয়েছে একেবারেই চুলার পাশে, যে কোনো সময় বড় ধরনের  অগ্নিকা- ঘটার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া বেশ ক’টি দোকানে লক্ষ্য করা গেছে গ্যাসের সিলিন্ডারের পাশে বসেই ধূমপান করার দৃশ্য। সিলিন্ডারের পাশেই ম্যাচ ঢুকিয়ে জ¦ালানো হয় সিগারেট, ম্যাচের কাঠিটা আগুনসহ ফেলা হয় সিলিন্ডারের পাশেই।
সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, জ্বালানি কাজে ব্যবহারকৃত সিলিন্ডার গ্যাস কোনো আবাসিক এলাকা বা মার্কেটে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। গ্যাস সিলিন্ডার রোদে না রাখা, নিরাপদ দূরত্বে সিলিন্ডার মজুদ করা, উপর থেকে সিলিন্ডার নিচে না ফেলার নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়াও এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হয়। এছাড়া এলপিজি সিলিন্ডারগুলো সংরক্ষণের জায়গায় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বৈদ্যুতিক সুইচ ও অন্যান্য উপকরণও থাকবে গোডাউনের বাইরের অংশে। স্থানটিও হতে হবে আগুনের ব্যবহার আছে এমন জায়গা থেকে দূরে। এমন শর্তে অনুমোদনের ছড়াছড়ি থাকলেও তদারকি না থাকায় এসব নির্দেশনা আর নিষেধাজ্ঞা মানছেন না উপজেলার বিভিন্ন বাজারের এজেন্ট ও সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, খোলা ও জনবহুল জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না। আমরা ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করেছি। সচেতনতার লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা জনসাধারণের মাঝে বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মানুষকে সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
ছবি-৩৫

সর্বাধিক পঠিত