চাঁদপুরের নদ-নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি
এক ফসলি জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত
গত ক’দিন ধরে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা-ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে চরাঞ্চলের এক ফসলি ধানের জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। যার ফলে কৃষকের আধাপাকা ও কাঁচা ধান ঘরে উঠানোর সম্ভাবনা কম। যদি ধান পেকে থাকে পুরোপুরিভাবে সে ধান ঘরে তুলতে পারবে না হয়তো। এতে করে কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাদের চোখে অশ্রু। তাদের এক ফসলি জমির আধাপাকা ও চালে ভরা কাঁচা ধান নিয়ে চিন্তিত, ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না। বহু কষ্ট করে চারা তৈরি করে ধান রোপণ করেছেন। আর সেই ধান এখন ঘরে তোলার সময় হয়েছে। আর এ সময়ই জোয়ারের পানিতে তাদের সকল ধান তলিয়ে যায়। পানির নিচে ডুবে যাওয়া ধানগুলো চিটা হয়ে যায়। গাছ ভেঙে পড়ে মাটিতে পড়ে যাবে। এতে তারা ফসল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন না। সে চিন্তায় তারা পাগলপ্রায়।
জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক বর্গা ও পোষানিতে জমি নিয়ে ধান চাষাবাদ করেছে। কেউ আবার ধার-দেনা করে জমি চাষাবাদ করেছে। তারা দেনার টাকা পরিশোধ করবেন কীভাবে। ধান চাষাবাদের উপর তাদের সংসার চলে আসছে। এ নিয়ে কৃষককুল হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সরজমিনে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে এক ফসলি ধানের জমির আধাপাকা ও চালে ভরা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে করে কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করতে দেখা যায়।
পানিতে ধান ডুবে যাওয়া তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, পাইকদী, হামানকর্দ্দি, চাঁদপুর মৌজা, হাজরা, মৈশাদী, চরমেয়াশা, নানুপুর, গাছতলাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, দিন দিন জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের আধাপাকা ও চালে ভরা ধান ঘরে তুলতে পারবো না। সব ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ যদি আমাদেরকে রক্ষা করেন। না হলে কোনো উপায় নেই আমাদের। আমরা অনেকে দেনা করে ধান চাষাবাদ করেছি। আমাদের এভাবে ক্ষতি হলে দেনার টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার খালেদ মাহমুদ বলেন, আকস্মিক জোয়ারে চরাঞ্চলের ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। গাছতলা ও নানুপুর ব্লকে প্রায় ৬৫/৭০ হেক্টর আধাপাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এতে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে কৃষকরা তাদের এক ফসলি জমির আধাপাকা ধান ঘরে তুলতে পারবে না। আমি আমার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অনেক কৃষককে সাথে কথা বলে জেনেছি তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আল্লাহ যেনো তাদেরকে রক্ষা করেন।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আয়েশা আক্তার বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাময়িক চরাঞ্চলের আধাপাকা ধান জোয়ারের সময় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জেনেছি। আবার ভাটার সময় পানি নেমে যায়। যদি জোয়ারের পানি আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তাহলে ক্ষতির আশঙ্কা করা যায়। ৭/১০ দিন সময় পেলে ধানগুলো কেটে আনতে পারবে। তাহলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।