পুরাণবাজার মেঘনায় অষ্টমী স্নান সম্পন্ন
পরিদর্শন করলেন শিক্ষামন্ত্রী ও পৌর মেয়র
সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের অষ্টমী স্নানযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ পাপ মোচনের নিমিত্তে মন্ত্রপুত হয়ে এদিন নদী বা খালের পবিত্রজলে গঙ্গাস্নান করে থাকেন। তাদের ধর্মীয় বিশ^াসমতে এদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অষ্টমী স্নান সম্পন্ন করলে তাদের সর্বপাপ বিনাশ হবে। সে বিশ^াস নিয়েই তারা আবহমানকাল থেকে এ স্নানযাত্রা সম্পন্ন করে আসছেন। প্রকৃত পক্ষে ব্যাপক আয়োজনে পবিত্র তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় অবস্থিত লাঙ্গলবন্দে এ স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিবছর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ভক্তবৃন্দ সমাবেত হন স্নানযাত্রা সম্পন্ন করার জন্যে। সময় ও সামর্থ্যরে কারণে অনেকেই পবিত্র তীর্থ স্থান লাঙ্গলবন্দে যেতে না পারার কারণে সুবিধাজনক নিজ নিজ স্থানের বৃহৎ জলাশয় বা নদীতে এ আয়োজন সম্পন্ন করে থাকেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরও শতাধিক বছর ধরে হয়ে আসা চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির সংলগ্ন মেঘনা নদীতে স্নানযাত্রা সম্পন্ন করার সকল আয়োজন করে চাঁদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ। তাদের এ আয়োজন স্বচক্ষে দেখার জন্য গত ৮ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরাণবাজার হরিসভা সংলগ্ন স্নানের স্থান পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি। তিনি স্নানযাত্রার স্থান ঘুরে দেখেন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদানপূর্বক করণীয় সম্পর্কে পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন। তিনি স্নানযাত্রার সফলতা কামনা করেন এবং ভক্তবৃন্দকে স্নানযাত্রার অগ্রিম শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
গতকাল ৯ এপ্রিল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চাঁদপুর জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন সকল বয়সী নারী-পুরুষ। তারা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে মেঘনায় স্নানযাত্রা সম্পন্ন করেন বিকেল পর্যন্ত। নিরাপত্তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ প্রশাসনসহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যগণ। কয়েক হাজার ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে গঙ্গাস্নান পরিণত হয় মিলনমেলায়। স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে শতাধিক ব্যবসায়ীর উপস্থিতি মেলা বসে। শিশুদের বাঁশি, বাদ্য বাজনার আওয়াজে মেলাস্থল মুখরিত হয়ে উঠে। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষজন ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, অন্নপূর্ণাসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা এবং অস্থায়ী মন্দির গড়ে পূজা সম্পন্ন করেন। আগত ভক্তবৃন্দ এ সকল স্থানে ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে পূজা সস্পন্ন পূর্বক পূর্ণ অর্জনের নিমিত্তে বিভিন্নভাবে দান দক্ষিণা প্রদান করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় মহা অষ্টমী স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানে আসেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। তিনি আগত পুণ্যার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানতে চেষ্টা করেন।
তিনি জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও স্নানযাত্রা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপ্রধানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্যে বলেন, প্রকৃত ধর্ম স্থাপনের মধ্য দিয়েই আমরা সমাজে শান্তি স্থাপন করতে পারি। কে কোন্ ধর্মের মানুষ তা বড় কথা নয়, কে কতটুকু ভালো কাজ করতে পেরেছে তা হলো বড় কথা। সকল ধর্মেই মন্দ মানুষ রয়েছে। এ সকল মন্দ ভাবাপন্ন মানুষদের আমাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, আপনারা কখনো নিজেদের সংখ্যালঘু বা অসহায় ভাববেন না। ভালোভাবে বেঁচে থাকা আপনাদের অধিকার। চাঁদপুর শহর শান্তির শহর, অসাম্প্রদায়িক শহর, আমরা যেকোন কিছুর বিনিময়েই তা রক্ষা করতে চেষ্টা করবো। যার যার ধর্ম সে, সে পালন করবে। আর তাদের ধর্ম পালনে তাদেরকে সহায়তা করা বৃহৎ সম্প্রদায়ের কর্তব্য বলে হাদিসে রয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় চাঁদপুরের উন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নয়নের এ ধারা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আগামী দুই বছরের মাথায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একটি অপশক্তি কাজ করছে। আমাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনো প্রকার গুজবে কান দেয়া যাবে না। কোনো গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য জেনে আমাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে স্নানযাত্রা সম্পন্ন করায় জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় নেতৃবৃন্দের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা জজ কোর্টের পিপি ও জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিৎ রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক উমেষ চন্দ্র সাহা, পৌর কাউন্সিলর মালেক শেখ, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক লিটন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক লিটন মজুমদার, সার্বজনীন জগন্নাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সহদেব দেবনাথ, ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা, শম্ভুনাথ শূর প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা পূজা পরিষদ নেতা কার্তিক চন্দ্র সরকার। স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স, শ্রী শ্রী সার্বজনীন জগন্নাথ মন্দির, শ্রী শ্রী রাধা মুরারী মোহন জিউড় মন্দির, শ্রী শ্রী লোকনাথ মন্দির ও আশ্রমে আগত ভক্তবৃন্দের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও চাঁদপুর পুরাণবাজার রামঠাকুর বাড়ি দোল মন্দির অষ্টমীস্থানস্থলে রামঠাকুরের প্রতিচ্ছবি স্থাপন পূর্বক ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করেন।