মতলব আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল ১২ দিনে ২৮৭২ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন অর্থাৎ গরমের প্রকোপেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও জেলা সিভিল সার্জন। গত ২১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ৪টা পর্যন্ত ১২ দিনে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ২ হাজার ৮শ’ ৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোগীর এ ভর্তির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দেড় গুণ বেশি।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২শ’ ৪০ থেকে ২শ’ ৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা-সেবা নিচ্ছেন।
চলতি মাসে গরম শুরু হওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে ২শ’ ৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২শ’ ৪০ জন। ২ এপ্রিল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের কক্ষগুলোতে ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। পর্যাপ্ত বেডের অভাবে রোগীদের বারান্দায় বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা-সেবা দেয়া হচ্ছে।
তথ্য মতে, গত বুধবারে হাসপাতালে একদিনে ৩শ’ ১৪ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২শ’ ৪জন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই চাঁদপুরের।
সরেজিমনে গতকাল বিকেলে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীতে ভরপুর। বারান্দায় রেখেও রোগীর চিকিৎসা চলছে। বারান্দায় চিকিৎসাধীন চাঁদপুর সদরের বিশ্বজিৎ (২৪) জানান, গত তিনদিন যাবৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসাসেবা চলছে। খোলা খাবার থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। এছাড়াও কুমিল্লার লালমাই এলাকার সামছুননাহার (৫০) জানান, বেশ ক’দিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন পূর্বের চেয়ে ভালো আছি।
হাসপাতাল অফিস সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা ৭০। তবে প্রতিদিন ৩০০ রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত জনবল, খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। আপাতত রোগীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। দূষিত খাবার ও দূষিত পানি পান করা, ময়লাযুক্ত খাবার মুখে দেয়ায় কারণে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও এখানে ডায়রিয়া রোগী আসছে। ভর্তি হওয়া রোগী ৪০ শতাংশই মাঝারি থেকে তীব্র পানিশূন্যতায় ভুগছেন।
আইসিডিডিআরবি,র সিনিয়র মেডিসিন অফিসার ডাঃ চন্দ্র শেখর দাস জানান, ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ হয়ে উঠতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুড়ি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরম, ময়লা পানি পান করা, বাহিরের খাবার ও পুকুরের পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কোথাও পানির সমস্যা হলে পুকুরের পানি ফুটিয়ে ঠা-া করে ব্যবহার করতে হবে। ভালোভাবে হাত ধুয়ে ও বাইরের খাবার এবং পচা-বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইনের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।