দাসপাড়া নাট মন্দির নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল মহৎ কাজের মধ্যেই মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকেন
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার দাসপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের নাট মন্দির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার বিকেলে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দসহ এলাকাবাসীর ব্যাপক উপস্থিতিতে নাট মন্দির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে পৌর মেয়র বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সমাজের ভালো কাজ করা সম্ভব। মহৎ কাজের মধ্য দিয়েই মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকেন। ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করলে হবে না, তাকে বিচার করতে হবে তার কর্মের মধ্য দিয়ে। আমি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ভোটে। তাই আমি অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়েই পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করতে চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি পৌরবাসীকে তাদের প্রাপ্য সেবা দিতে।
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য আরো বলেন, আপনারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু ভাববেন না। আপনাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে, সে অধিকারের দাবি নিয়েই আপনারা এগিয়ে যাবেন। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার সকল ভালো মানুষ আপনাদের পাশে আছে। নিশ্চয়ই তার প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতকারীরা যখন আপনাদের প্রাণের এই দুর্গা মন্দির ভাংচুর করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করছিল, তখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষজন আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন আপনাদের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি এ সংবাদ পেয়ে চুপ করে বসে থাকেন নি। ছুটে এসেছেন আপনাদের কাছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। দুষ্কৃতকারী যেই হোক তার বিচার হবে। আপনাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই মন্দির নির্মাণ শুরু করেন, আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী সেদিন যথার্থ কথাই বলেছেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। ঘটনার সাথে জড়িতরা আটক হয়েছে। আর আপনারা তাৎক্ষণিক নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন বলেই আজ এতো সুন্দর মন্দির নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। এ পরিবেশ আপনাদেরকে ধরে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন করতে হবে। দেশের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ হাঁটবে কি হাঁটবে না, তার সিদ্ধান্ত আপনাদেরকেই নিতে হবে। তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চলমান বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি), জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সদস্য সচিব রাধা গোবিন্দ গোপ, চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মানিক জমাদার, দাসপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাস প্রমুখ।
দাসপাড়া সার্বজনীন কালীমন্দির কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাসের সভাপ্রধানে ও উপদেষ্টা বিশ^নাথ দাসের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডঃ নিবাস সরকার, শনিরাম দাস, শ্যাম সুন্দর দাস, বাবু লাল দাস, মৃনাল কান্তি দাস, অজিত দাস, মৃদুল দাস, দ্বিবাস দাস, খোকন দাস মনা, উৎপল দাস, সঞ্জয় মজুমদার, রাম দাস, পংকজ দাস নয়ন দাস, সুমন দাস প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের ১৪ জুন রাতের আঁধারে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দীর্ঘ বছরের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরের দুর্গা মূর্তি ভাংচুরসহ পুরো মন্দিরটি ভেঙ্গে চুরে মন্দিরের আসবাবপত্রসহ মন্দিরের পুরো অবকাঠামো (স্ট্রাকচার) নিয়ে যায়। যার সংবাদে সাংবাদিকসহ পুরো শহরবাসী স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনাশের কলঙ্ক লিপিবদ্ধ হয় শহরবাসীর কপালে। সেদিনের সে ঘটনায় এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ছুটে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। শিক্ষামন্ত্রী আশ^াস দেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের। তার আশ^াসের ভিত্তিতেই দাসপাড়াবাসী ভাঙ্গনকৃত স্থানে গড়ে তোলেন সুসজ্জিত দুর্গা মন্দির।