• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

স্ত্রীকে নিয়ে কখনোই সুখী ছিলেন না ইসমাঈল

আদরের মেয়ে প্রিয়াকে হারিয়ে ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই

প্রকাশ:  ১৬ মার্চ ২০২২, ১০:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 শাহরাস্তি উপজেলার আলোচিত প্রিয়া হত্যার পর তাদের পরিবারে শোক এখনো কাটেনি। প্রিয়ার অবুঝ সন্তান আনহার ও প্রিয়ার ছোট ভাই পরশ মা ও বোনকে হারিয়ে একাকিত্ব জীবন-যাপন করছেন। প্রিয়া হত্যার পর পুলিশ মায়ের প্রেমিক হান্নান ও প্রিয়ার মা তাহমিনা সুলতানাকে আটক করে। সেই সময় তারা স্বীকার করে, মায়ের প্ররোচনাতেই প্রেমিক হান্নান দু’জনের সহযোগিতায় প্রিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বর্তমানে প্রিয়া হত্যা মামলা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রেমিক হান্নান ও প্রিয়ার মা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শাহরাস্তি উপজেলার আহম্মদনগর ছোট পোদ্দার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় প্রিয়ার একমাত্র ছোটভাই পরশের সাথে। বাড়িতে একাই সে বসবাস করছে, বন্ধু নাহিদ হোসেন রাতে তার সাথে থাকে। পাশের বাড়ির দাদীর (বাবার ফুফু) বাসায় গিয়ে খেয়ে আসে পরশ। অগোছালো ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বাড়িটি সংস্কারের জন্য পরশের পিতা প্রবাসী ইসমাঈল হোসেন তার ফুফাতো ভাই দিদার হোসেন বাবুকে দায়িত্ব দিলে বিগত তিন মাস ধরে তিনি বাড়ির কাজ করে যাচ্ছেন। পরশ জানায়, সে এ বছর এসএসসি পাস করেছে। এরপর মেহের ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। প্রিয়া হত্যার পর তার বাবা ইসমাঈল হোসেন এখনো দেশে আসেন নি। ‘আকামা’ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিনি আসতে পারছেন না। পরশ জানায়, সে এখন আর আগের মতো বাইরে সময় পার করে না। কোনো কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে আর মন চায় না তার। মা, বোন, আর ভাগ্নির কথা মনে হলে কান্নায় দু’ চোখ ভেসে যায় তার।
পরশ নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে জানায়, প্রিয়ার স্বামী তথা তার ভগ্নিপতি হৃদয় আর তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন না। ফোন দিলেও তার ফোন রিসিভ করেন না। আদরের ভাগ্নির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলেও কথা বলা সম্ভব হয় না। গত ৩১ জানুয়ারি আদরের ভাগ্নি আনহারের জন্মদিন ছিলো। পরশ কুমিল্লার বাগিচাগাঁও গিয়ে ভাগ্নির সাথে জন্মদিনের সময় পার করে আসে। প্রিয়ার স্বামী হৃদয় পরশের সাথে কোনো কথা বলেননি, তাই অভিমানে রাতে সে খালার বাসায় চলে যায়। বোনের হত্যার সাথে তার মা জড়িত তা মেনে নিতে কষ্ট হয় পরশের, তাইতো রাগে-অভিমানে এখনো জেল হাজতে মাকে এক নজর দেখতেও যায়নি পরশ।
পরশের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে পরশের পিতা ইসমাঈল হোসেন ভিডিও কল করেন। সে সময় তিনি সাংবাদিক-উপস্থিতির কথা জানতে পেরে দীর্ঘক্ষণ ভিডিও কলে তার দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি তাহমিনাকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর থেকে তিনি একদিনের জন্যেও শান্তিতে বসবাস করতে পারেন নি। তিনি জানান, তাহমিনাকে বিয়ে করার পর থেকে তার জীবনে অশান্তি নেমে আসে। সংসারে শান্তির জন্যে তিনি অনেক কিছু করেও ব্যর্থ হন। তিনি ২০০২ সালে তার স্ত্রী ও মেয়ে প্রিয়াকে তার কর্মস্থল সৌদি আরবে নিয়ে যান। সেখানেই পরশের জন্ম হয়। ২০০৮ সালে তারা বাড়িতে চলে আসে। তিনি আরও জানান, তার সংসারে অশান্তির মূল কারণ তার চাচা শ^শুর মনিরুল ইসলাম। তিনি কুপরামর্শ দিয়ে তার সংসারে অশান্তি লাগিয়ে রাখতেন। তিনি জানান, তার স্ত্রী আগে থেকেই বেপরোয়া চলাফেরা করতো। হান্নানের সাথে তার সম্পর্ক আগে থেকেই, যেটা অনেকে জানতো। এ নিয়ে অভিযোগও করা হয়েছে। তিনি বিশ^াস করেন, তার আদরের মেয়েকে তার স্ত্রীর প্ররোচনায় হান্নানই খুন করেছে। তবে হান্নানের সাথে আর কারা জড়িত তা জানতে তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
শাহরাস্তির এই বর্বরোচিত হত্যাকা-ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সর্বাধিক পঠিত