শিশুদের ক্লাস চলাকালীন যুব আন্দোলনের তৃণমূল সম্মেলন
মাইকের বিকট আওয়াজে অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একাধিক মাইকের বিকট আওয়াজে শিশুদের ক্লাস চলাকালীন ইসলামী যুব আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন করার ঘটনায় অভিভাবকসহ পুরো শহর জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
ঘটনাটি ঘটে গত ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। জানা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন যুব আন্দোলনের তৃণমূল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্টেজসহ সম্মেলনস্থলটি একেবারে বিদ্যালয় ভবন ঘেঁষে করা হয়। ফলে স্টেজের সম্মুখে এবং চারদিকে মাইক লাগানোর কারণে উক্ত বিদ্যালয়ের ক্লাসগুলোতে পাঠদানে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোমলমতি শিশুদের শব্দ দূষণের মতো বড় সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে।
ভুক্তভোগী অভিভাবকগণ বলেন, করোনা মহামারীর মতো বিশাল একটি দুঃসময়ে যখন বাবা-মার মৃত্যু হলেও সন্তান কাছে যেতো না বা পরিবারের লোকজন লাশের কাছে যেতো না, তখন সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখা যেখানে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের মরদেহ দাফন, সৎকার, সমাহিত করে পুরো জেলায় সুনাম অর্জন করেছে, সেখানে সেই সংগঠনের সহযোগী যুব সংগঠনের এ রকম কা-জ্ঞানহীন কাজের প্রত্যাশা কখনোই করেনি জেলার সচেতন নাগরিকগণ।
হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু অভিভাবক জানান, করোনা মহামারীর কারণে প্রায় ২ বছর বিদ্যালয়টি বন্ধ ছিলো। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অনেক সমস্যায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে। এই ক্লাস চলাকালীন ইসলামী যুব আন্দোলনের মাইকের বিকট আওয়াজের কারণে কোমলমতি শিশুদের পাঠদানে ও শব্দের সমস্যায় শিশুদের চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিভাবে রাজনৈতিক সম্মেলন করার অনুমতি দিয়েছে, এটি আমাদের বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইসমত আরা সাফী বন্যা বলেন, স্কুল চলাকালীন ইসলামী যুব আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন করেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুবারে ৪ জন শিক্ষক তাদের কাছে পাঠিয়ে মাইকের সাউন্ড কমানোর জন্যে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। তাদের মাইকের বিকট আওয়াজের কারণে বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীর পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন জানান, প্রোগ্রামটি ছিলো ইসলামী যুব আন্দোলনের। আমরা তাদের সাথে সমন্বয় করেছি। ইসলামী যুব আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এইচএম নিজাম মাঠের বিষয়ে অনুমতি এনেছে। এ বিষয়ে সে-ই ভালো বলতে পারবে। তবে সে আমাদের বলেছে স্কুলের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে। স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিবে বলেছে।
সবচেয়ে প্রশংসনীয় বিষয় হচ্ছে, আয়োজক সংগঠনের আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সৈয়দ ফয়জুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই নিজেও স্কুল চলাকালীন প্রোগ্রামের আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সেক্রেটারী কেএম ইয়াসিন রাশেদ সানী বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা নিজেরাই বিব্রত বোধ করেছি। তাই যে বা যারা সংগঠনের নেতাদেরকে প্রতারণা বা ভুল বুঝিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।