প্রশাসনের নীরবতায় চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষোভ
ইজারাবিহীন বাজারের টোল আদায় ব্যক্তির নামে ॥ সওজের জায়গা দখল করে বহু দোকান
সফরমালী বাজারটি চাঁদপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু ছাগলের হাট হিসেবে জেলাব্যাপী পরিচিতি রয়েছে। সপ্তাহে প্রতি সোমবার এই বাজারে পশুর হাট বসে। এছাড়াও প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময় কোরবানির পশুর সবচেয়ে বড় হাট বসে এই বাজারে। ঈদের সময় ১০ থেকে ১৫ দিনব্যাপী বসে এই হাট। হাটটি এতোটাই জমজমাট হয় যে, দিন-রাত এখানে কোরবানির পশু বেচা-কেনা হয়। এতো বড় পশুর হাট, অথচ সরকার কোনো রাজস্ব পায় না এই হাট থেকে। জেলার সকল হাট-বাজার ইজারা হলেও সফরমালী বাজারটি ইজারা হয় না। শুধু সাপ্তাহিক হাট নয়, কোরবানির পশুর হাটও ইজারা হয় না।
এদিকে সরকারিভাবে এটি ইজারা দেয়া না হলেও টোল আদায় ঠিকই হচ্ছে। আর এই টোলের টাকা যাচ্ছে ব্যক্তির পকেটে। সরকারকে বঞ্চিত করে ব্যক্তি পর্যায়ে ইজারাবিহীন বাজার থেকে টোল আদায়ের বিষয়টি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা ও সদর উপজেলার মাসিক সভায় একাধিকবার তুলেছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান।
সফরমালী বাজারটি চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীপথ ও সড়কপথ উভয় ব্যবস্থাই বেশ ভালো। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় মানুষ সপ্তাহে এবং বছরে কোরবানির ঈদের সময় এই বাজার থেকে পশু কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। খামারিরাও এই বাজারে নদীপথে এবং সড়কপথে গরু, ছাগলসহ অন্যান্য পশুর বহর নিয়ে আসে। ঈদুল আজহার সময় এই বাজারে কয়েক কোটি টাকার কোরবানির পশু বেচা-কেনা হয়। অথচ সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। সাপ্তাহিক হাট এবং কোরবানির পশুর হাট থেকে টোল আদায় করেন স্থানীয়ভাবে মরহুম হারুন খানের পরিবারের সদস্যরা। অথচ ব্যক্তি পর্যায়ে টোল আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। এই অনিয়মটিই কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
জানা গেছে, আদালতে মালিকানা নিয়ে মামলা রয়েছে এই বাজারের জায়গার উপর। এই মামলার অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে টোল আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলটি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, আমি জেলা সমন্বয় সভায় এবং উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় সফরমালী বাজারের বিষয়টি একাধিকবার তুলেছি। প্রায় তিন বছর যাবত আমি এই অনিয়মের বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিতে আনছি। কিন্তু বিষয়টির কোনো সুরাহা হয় নি। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা থাকলে জায়গার মালিকানা নিয়ে আছে। কিন্তু আদালত থেকে তো বলে দেয়া হয় নি ব্যক্তি পর্যায়ে টোল আদায় করতে। প্রশাসন এই অনিয়মটা তো বন্ধ করতে পারে। কারণ, ইজারাবিহীন কোনো বাজার থেকে টোল আদায় করার নিয়ম নেই।
নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বাগাদী চৌরাস্তার একেবারে মোড়ে সড়ক ও জনপথের জায়গায় বেশ কিছু দোকান জনৈক ব্যক্তি তুলেছেন। তিনি নিজে এসব দোকান এককালীন সেলামী নিয়ে ভাড়া আদায় করছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রকাশ্যে একটি জনবহুল জায়গার চার রাস্তার মোড়ে এভাবে দোকান তুলে সড়কের জায়গা দখল করা হলেও কর্তৃপক্ষ কখনো এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। আমি প্রশাসনকে সরজমিনেও বিষয়টি দেখিয়েছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা! এ দুটি প্রসঙ্গ তুলে নাজিম দেওয়ান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে অনিয়ম এবং অবৈধ কাজকে নীরব থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাতে অপরাধীরা আরো সাহস পেয়ে যায়।