নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার আত্মসাতের ঘটনায় ১০ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী নুর মোহাম্মদ আটক
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাতের দায়ে চাঁদপুর শহরের বড় রঘুনাথপুর গ্রামের সরদার বাড়ির প্রতারক নুর মোহাম্মদকে আটক করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ।
জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশে জনৈক আইনজীবীর চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের এএসআই কফিল উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
জানা যায়, আটককৃত নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের আদালতে ১ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। প্রত্যেকটি মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের এএসআই কফিল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আটক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আমার কাছে ১০টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এ সকল পরোয়ানা মূলে তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এছাড়াও আমার কাছে ইতোমধ্যে আরো বেশ কিছু মামলার তথ্য আসছে। আটক নুর মোহাম্মদকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর শহরতলীর বড় রঘুনাথপুর গ্রামের সরদার বাড়ির মোহাম্মদ আলী সরদারের বড় ছেলে নুর মোহাম্মদ সরদার ২০০১ সালের দিকে চাকুরির উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানার একটি গার্মেন্টেসে যোগদান করেন। চাকুরির সুবাদে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে খুচরা জুট ব্যবসা শুরু করেন।
প্রভাবশালীদের নজরে আসার জন্য তিনি তাদের সাথে প্রথমে কথা ও কাজে মিল রেখে এক পর্যায়ে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিচয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দর উপজেলার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার খালিদ ওবায়েদ উল্লাহ ওরফে মিয়া সোহেলকে কৌশলে পটিয়ে তার বাসার ভাড়াটিয়া হিসেবে পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবাস করেন। সময় অসময়ে বিভিন্ন চল-ছাতুরির মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠতা করে বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করে মিয়া সোহেলের পরিবারের সদস্য পরিচয়ে বন্দরে এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নেন।
শুধু তা-ই নয়, মিয়া সোহেল ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে কৌশলে কয়েক দফায় ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা থেকে লাপাত্তা হন।
এ ঘটনায় আটক নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সিআর ৬১৬/২০ স্মারক নং-২৯০, সিআর ৬১৭/২০ স্মারক নং- ২৯১, সিআর ৬১৮/২০ স্মারক নং-২৯২, সিআর ৪৫৭/২০ স্মারক নং- ২৮৯৭, সিআর ৪৫৮/২০ স্মারক নং- ২৮৯৮, সিআর ৫০০/২০ স্মারক নং-৯৬। সিআর ৮৯/২০ মামলাটি করেন আলী আহমেদ ভূঁইয়া। ১০ লাখ টাকা পাওনা হওয়ায় জনৈক রেহানা আক্তার ১০ লাখ টাকা পাওনায় সিআর মামলা করেন যার নং-৩১৯/২০ ইমন খান ১৫ লাখ টাকা পাওনায় সিআর মামলা নং ৩২০/২০। এছাড়াও টান বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ১৮ লাখ টাকা, চাঁদপুরের পৈত্রিক বাড়ি বন্দরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ১৫ লাখ টাকা পাওনার মামলা করেন। প্রতিটি সিআর মামলার বাদির কাছে থেকে নূর মোহাম্মদ ব্যাংক একাউন্টের চেক দিয়ে টাকা নেয়। অথচ সে নিজের নাম লিখতে কলম ভাঙ্গে। বন্দর থানায় ব্যবসায়ীদের করা ২৫টির মতো জিডি রয়েছে। এমন কি সপরিবারে বাসা ভাড়া করে থেকে সে বাসা ভাড়া না দেয়ায় বাড়ির মালিকও তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন্দর থানায়।
এদিকে নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে দায়েরকৃত এক ডজনেরও মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ সকল গ্রেফতারি পরোয়ানা চাঁদপুর সদর মডেল থানায় রয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা প্রতারক নুর মোহাম্মদের অপকর্মের বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রতারক নুর মোহাম্মদকে নিয়ে গত বছরের জুন মাসে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে বিরাট সংবাদ প্রকাশিত হয়।