বিশেষ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ড. আবু আলী ইবেনে সিনা
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডভিত্তিক পুরস্কার ইয়ং ইলেকট্রোকেমিস্ট অ্যাওয়ার্ড। তরুণ গবেষক বিজ্ঞানীদের জন্য এই পুরস্কারের প্রবর্তন ঘটে। সম্প্র্র্রতি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার পৌর ১৪ নং ওয়ার্ডস্থ বাবুরহাটের বাসিন্দা ড. আবু আলী ইবনে সিনা ভূষিত হয়েছেন এই পুরস্কারে। বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী এর আগেও বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছিলেন মাত্র ১০ মিনিটে ক্যান্সার শনাক্তকরণ ডিভাইস আবিষ্কারের মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিজ্ঞানী নিজের অনুভূতি শেয়ার করেছেন এভাবে- “গবঃৎড়যস অঁংঃৎধষরধ-ঘবি তবধষধহফ ধহফ ঊষবপঃৎড়পযবসরংঃৎু উরারংরড়হ ড়ভ ঃযব জড়ুধষ অঁংঃৎধষরধহ ঈযবসরপধষ ওহংঃরঃঁঃব-কে ধন্যবাদ আমাকে ইয়ং ইলেকট্রোকেমিস্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করার জন্য। এটি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের তরুণ গবেষকদের জন্য একটি প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার। মেট্রোম পৃথিবীর বিখ্যাত একটি ইলেকট্রোকেমিস্ট্রি কোম্পানি, যাদের ৮০টি দেশে ব্যবসা সম্প্রসারিত। আর রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কেমিক্যাল ইনস্টিটিউট হলো অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের কেমিস্টদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। প্রতিবছর তারা তরুণ গবেষকদের তাদের গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এ পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত এবং এটি আমার গবেষণার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।'
ড. আবু আলী ইবনে সিনা চাঁদপুরের বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর কিছুদিন বার্জার পেইন্টসে কাজ করেছেন।পরবর্তীতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে। এরপর উচ্চতর গবেষণা ও পিএইচডি করতে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন। এখানে ন্যানো-টেকনোলজি থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে রিসার্চ ফেলো হিসেবে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেছেন।
এই বিজ্ঞানীর বাবা মোঃ শহীদুল্লাহ (শহীদুল্লাহ মাস্টার) এবং মা সুরাইয়া আক্তার। দুজনই শিক্ষক ছিলেন। বাবার ছিলেন চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। বাবা-মা দ্বারা অনুপ্রাণিত এই বিজ্ঞানী সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান।
বর্তমানে ড. সিনা স্ত্রী সাবিহা সুলতানা ও ছেলে জাবির ইবনে হাইয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। উল্লেখ্য, সাধারণ রক্ত বায়োপসি কোষ থেকে সব ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি আবিষ্কার করেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ওই আবিষ্কারের ফলে আগামী দিনে মোবাবাইল ফোনের মতো সহজ ডিভাইসগুলোর মাধ্যমেও রোগীর ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে। ওই পরীক্ষায় এমন একটি সরঞ্জাম রয়েছে, যা গবেষণাগার অনুযায়ী ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো জিনোম পর্যায়ে প্যাটার্ন পরিবর্তনের বিশ্লেষণে সহায়তা করতে সক্ষম। গবেষণা জার্নালটি ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। আলোচিত ওই বিজ্ঞানীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আবু আলী ইবনে সিনা। তিনি জানান, ইলেকট্রোকেমিক্যাল বা তড়িৎ রসায়ন পদ্ধতিতেও কারেন্ট সিগন্যাল মেপে এক ধরনের মেশিনের মাধ্যমে ক্যান্সারের এই পরীক্ষা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে হয়তো এই মেশিনটি আরও ছোট আকারে তৈরি করা গেলে একসময় মোবাইল ফোনের সঙ্গে মেশিনটি সংযোগ দিয়েই ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে।'বর্তমানে একেক ক্যান্সার নির্ণয়ে একেক রকম টেস্ট করতে হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সার ধরা পড়ে এমন পর্যায়ে, যখন তার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু উদ্ভাবিত এ টেস্টটির মাধ্যমে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনো ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে। এতে করে ক্যান্সারের হাত থেকে লাখো মানুষকে বাঁচানো যাবে।
ড. ইবনে সিনা বলেন, “উদ্ভাবিত এই টেস্টটির মাধ্যমে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে যে কোনো ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে। আর তাই চিকিৎসাও শুরু করা যাবে দ্রুত।” আর তাঁর গবেষণার বিশেষত্ব এখানেই। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে বেঁচে যাবে লাখো প্রাণ। তাও এই ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যাবে খুবই কম সময়ে, সহজ এবং সাশ্রয়ী পরীক্ষার মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা বলছেন মাত্র ১০ মিনিটে সব ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিতে।