মতলবে জেলেদের মাঝে বিতরণকৃত ১৩ ছাগলের মৃত্যু ॥ উপকারভোগীদের ক্ষোভ
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত ৩২টি ছাগলের মধ্যে ১৩টি মারা গেছে। এ নিয়ে উপকারভোগী জেলেদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর কুমিল্লা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জেলেদের বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে ৬০টি ছাগল বিতরণের বরাদ্দ আসে। জেলেদের মাঝে বিতরণ করা ছাগলগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। যার প্রতিটি মূল্য ছিলো ৮ হাজার টাকা। গত ২৬ জানুয়ারি নিবন্ধনকৃত ১৬ জন জেলের মাঝে দুটি করে মোট ৩২টি ছাগল প্রদান করা হয়। বিতরণকৃত ছাগলগুলোর মধ্যে মতলব পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের চরমুকুন্দি গ্রামের মিলন সরকারের দুটি, আনোয়ার হোসেন প্রধানের দুটি, আলী আক্তার সরকারের একটি, বোরহান প্রধানের দুটি, জাহাঙ্গীরের দুটি, মোজাম্মেল সরকারের একটি, সাজু মিয়ার দুটি, জাকির হোসেনের একটিসহ মোট ১৩টি ছাগল কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যায়।
জেলেদের অভিযোগ, আমাদের যে ছাগল দেয়া হয়েছিলো তার বয়স অনেক কম এবং রোগাক্রান্ত। যখন আমাদের এ ছাগল দেয়া হচ্ছিলো তখনই আমরা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলেছিলাম আরও বড় ছাগল দিতে। কিন্তু তিনি আমাদের কথার কোনো কর্ণপাত করেননি। উপকারভোগী আনোয়ার বলেন, আমার ছাগলটি পাওয়ার একদিন পরেই মারা গেছে।
জেলে বোরহান প্রধান বলেন, আমার ছাগলের মৃত্যুর বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তাদের জানালে তিনি মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাগলের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিলেও তাকে অফিসে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।
আলী আক্তার সরকার বলেন, আমার দুটি ছাগলের মধ্যে একটি মারা গিয়েছে। এখন যেটি আছে তাকে এ পর্যন্ত হাজার টাকার ওষুধ খাইয়েছি। কিন্তু শঙ্কায় আছি এটিও যেনো কখন মরে যায়! আমাদের যে ছাগলগুলো দিয়েছে তার আনুমানিক বাজারমূল্য তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।
জেলে মিলন সরকার বলেন, আমাদের যে ছাগল দেয়া হয়েছে এগুলো সব দুধের ছাগল। মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার কারণেই এগুলো দুর্বল এবং আকারেও ছোট। ছাগল পাওয়ার পর অনেক ওষুধ খাওয়ানো হয়ে ছিলো, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
এদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দের বিপরীতে কম দামের ছাগল বিতরণ করে ঠিকাদার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলে প্রচার হচ্ছে। এদিকে জেলেদের মাঝে বিতরণের জন্যে ৬০টি ছাগলের বিপরীতে ৩২টি ছাগল বিতরণ করা হলেও বাকি ছাগল কাদের দেয়া হয়েছ সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যাদের ছাগল মারা গেছে পরবর্তীতে তাদের ছাগল দিয়ে দেবো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ছাগলগুলো রোগাক্রান্ত বা পরিপক্ক হওয়ার আগে মায়ের দুধ ছাড়িয়ে নেয়ায় পুষ্টিহীনতার কারণে মারা যেতে পারে।
বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যুর বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যুর বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি।