শপথ নিলেন হাইমচর, ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ার নবনির্বাচিত ২৯ ইউপি চেয়ারম্যান
জনপ্রতিনিধিদের কাছে মানুষের চাহিদা অনেক, তাদের ভালোবাসার জায়গাটা ধরে রাখতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
চাঁদপুর জেলার হাইমচর, কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত ২৯ জন ইউপি চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের এ শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শপথবাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর ও চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপ্রধানে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী পরিচালক আখতার জাহান সাথীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, কচুয়া পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন ও হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম কাউছার উল আলম, কচুয়া উপজেলার গোহট উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেন ও হাইমচর উপজেলার আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতিকুর রহমান পাটওয়ারী।
উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দাউদ হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ইউসুফ গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, পিপি অ্যাডঃ রণজিত রায় চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরীসহ গণমাধ্যম প্রতিনিধি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
শপথগ্রহণ করার পর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের এক এক করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।
এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে মানুষের আকাক্সক্ষা ও চাহিদা অনেক। সব কিছু পূরণ করা সম্ভব না হলেও সহমর্মিতা দিয়ে সুন্দর আচরণ করে তাদের ভালোবাসার জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। যারা যে এলাকার ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন, সে এলাকার প্রতিটি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন এটা অবশ্যই আমাদের কাম্য। আমিও একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের কাছে আমি অঙ্গীকার করছি যে কাজে আমার যতোটুকু সহযোগিতা করা দরকার ইনশাল্লাহ আপনারা পাবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ আগামীদিনেও সকল প্রতিবন্ধকতা-ষড়যন্ত্র-বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে পরপর তিনবার শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গত ১৮ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া দেখে সারা বিশ্বের কাছে এ এক বিস্ময় ঘটনা। একের পর এক সাফল্য অর্জনে আমরা শুধু গর্ব অনুভবই করি না প্রতিটা মুহূর্ত আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগে বিদ্যুৎ ছিলো ১৬শ’ মেগাওয়াট। সেখান থেকে শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছরের মধ্যে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। বড় বড় মেগাপ্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পথে। এ রকম করে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরক্ষরতা দূরীকরণ সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর যে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিলো, তাঁর এই পথ ধরে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।
ডাঃ দীপু মনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি আমরা যারা আছি, আমরা জনসেবা, দেশসেবা করার মানুষ। আর প্রশাসনে যারা আছে তাদের দায়িত্ব দেশের সেবা করা। সকলে মিলে আমরা যেনো আমাদের দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি। দায়িত্ব যেভাবে পালন করার কথা আমরা যেনো সেভাবে করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুধু শহর নয়, গ্রামের অবকাঠামো অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। গ্রামপর্যায়ে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেছেন। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা মানুষের কল্যাণে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি বলেন, শেখ হাসিনা চমক লাগানো উন্নয়ন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আমার নির্বাচনী এলাকা ফরিদগঞ্জে বিগত পঞ্চাশ বছরে যে কাজ হয়নি তার চেয়ে অধিক উন্নয়ন কাজ হয়েছে এই ক’বছরে। ফরিদগঞ্জবাসী ফায়ার স্টেশন পেয়েছে, কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ হচ্ছে। নতুন ব্রিজ নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের ভিত্তিমূল হচ্ছে তৃণমূল। সেখান থেকেই আমাদেরকে আগামী নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।
শপথবাক্য পাঠ শেষে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে নির্বাচিত সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান স্ব স্ব উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শপথ নেয়া নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ হলেন : হাইমচর উপজেলার ৪ জন। যথাক্রমে নীলকমল ইউনিয়নে সউদ আল নাছের, আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নে মোঃ আতিকুর রহমান পাটওয়ারী, আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে আঃ জলিল মাস্টার এবং হাইমচর ইউনিয়নে সরকার আব্দুল জুলহাস।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩ জন। যথাক্রমে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও পশ্চিম ইউনিয়নে মোঃ জসিম উদ্দিন স্বপন মিয়া, সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নে মোঃ বেলায়েত হোসেন ও পশ্চিম ইউনিয়নে মোঃ মহসীন হোসেন, গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নে মোঃ শাহজাহান ও পশ্চিম ইউনিয়নে মোঃ বুলবুল আহমেদ, পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে আবু তাহের পাটওয়ারী, গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে মোহাম্মদ শাহআলম ও দক্ষিণ ইউনিয়নে মোঃ আলাউদ্দিন, রূপসা উত্তর ইউনিয়নে এসএম কাউছার উল আলম ও দক্ষিণ ইউনিয়নে মোঃ শরীফ হোসেন, চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নে মাহমুদুল হাসান ও পশ্চিম ইউনিয়নে মোহাম্মদ শাহজাহান।
কচুয়া উপজেলার ১২ জন। যথাক্রমে সাচার ইউনিয়নে মোঃ মনির হোসেন, পাথৈর ইউনিয়নে মোঃ আক্কাস আলী মোল্লা, বিতারা ইউনিয়নে মোঃ ইসহাক সিকদার, পালাখাল মডেল মোম হাবিবুর রহমান, সহদেবপুর পশ্চিম ইউনিয়নে আলমগীর হোসেন, কচুয়া উত্তর ইউনিয়নে আখতার হোসাইন, কচুয়া দক্ষিণ ইউনিয়নে খন্দকার আরিফুজ্জামান, কাদলা ইউনিয়নে মোহাম্মদ নূরে-ই আলম, কড়ইয়া ইউনিয়নে মোঃ আঃ ছালাম, গোহট উত্তর ইউনিয়নে মোঃ কবির হোসেন ও দক্ষিণ ইউনিয়নে মোঃ আমির হোসেন এবং আশ্রাফপুর ইউনিয়নে রেজাউল মাওলা হেলাল।