হাজীগঞ্জে আলুতে ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকদের ॥ বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা কৃষি কর্মকর্তার
হাজীগঞ্জে চলতি মৌসুমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় আলু উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুম শুরুর দিকে বৈরী আবহাওয়া আর আলু চাষে কৃষকদের কোনো প্রণোদনা না দেয়ায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ফের বিদ্রোহ না করলে পেঁয়াজ, সরিষা, রসুনসহ অন্য সকল রবি শস্য উৎপাদনে বেগ পেতে হবে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলু চাষের চলতি মৌসুম শুরুর দিকে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর আলু চাষ করার কয়েক দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ-এর প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে আলু ক্ষেতে পানি জমে যায়। একই সাথে সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে প্রথমদিকে রোপণকৃত আলুর জমি সবটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফের কৃষকরা এ ফসলগুলো রোপণ করতে বাধ্য হয়। মূলত চলতি মৌসুমে ৯০ ভাগ কৃষককে আলুসহ অন্য সকল রবি শস্য দুবার রোপণ করতে হয়েছে। এতে করে চলতি মৌসুমের ফসল তোলার পর লাভের অংকের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজীগঞ্জে ৬০৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ছে ১৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিলো (২০২০-২০২১ অর্থবছর) ৭৮০ হেক্টর। অর্থাৎ এ বছর আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৭৫ হেক্টর। এই লক্ষ্যমাত্রার কমার প্রধান কারণ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ।
এছাড়া চলতি বছর ৪৮০ হেক্টর জমিতে ২৭২ মেট্রিক টন সরিষা, ৩৭ হেক্টর জমিতে ২২২ মেট্রিক টন রসুন ও ৬৫ হেক্টর জমিতে ৫২০ হেক্টর পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে সবচে বেশি আলু চাষ হয় কালচোঁ দক্ষিণ, কালচোঁ উত্তর, রাজারগাঁও ও দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নে। অন্য সকল ইউনিয়নে আলুসহ মশলা চাষ হয়ে থাকে যা, পরিমাণে পর্যাপ্ত না।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আসার আগেই অধিকাংশ কৃষক আলুর জমি তৈরি করাসহ আলুর বীজ রোপণ করে ফেলেন। এরই মধ্যে জাওয়াদের কারণে টানা তিনদিনের বৃষ্টির পানি সেই জমিতে আটকে যাওয়ার রোপণকৃত আলুর জমিসহ বীজ আলু নষ্ট হয়ে যায়। মূলত জমি অনাবাদী না রেখে কৃষক দেনা-পাওনা করে ফের সে সকল জমিতে আলুর চাষ করে।
উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের কালচোঁ গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের জানান, তিনি আড়াইকানি (৩শ’ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছেন। গাছের অবস্থান দেখে বোঝা যাচ্ছে, ফলন ভালো হবে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায় তার কোনো বিশ্বাস নেই।
কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস জানান, গত বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছিলো। তাই এবার নিজের ২ কানি (২৪০ শতাংশ) জমি, আরো বর্গা নিয়েছি ৩ কানি। মোট ৫ কানি (৬ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, গত সপ্তাহে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। নতুন করে কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করা যায়। তবে চলতি বছরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমেছে প্রায় ২শ’ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলু, সরিষা, রসুন ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছি।
তিনি আরো জানান, চলতি বছর ২৫০ জন সরিষা এবং ২০ জন রসুন ও পেঁয়াজ চাষীকে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় প্রায় ২৮০ হেক্টর আলুর বীজ, ৪০৫ হেক্টর সরিষা বীজ, ৬১০ হেক্টর শীতকালীন সবজি ও ১৫ হেক্টর রসুনের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও ৪০ হেক্টর জমির বপনকৃত পেঁয়াজের অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট এবং ৫০৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের বীজতলার প্রায় ১০ শতাংশ নষ্ট হয়েছিলো।