অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের স্ত্রীর ইন্তেকালে সর্বত্র শোকের ছায়া ॥ দাফন সম্পন্ন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত (১৯৭০) গণপরিষদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মরহুম অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের সহধর্মিণী, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানের মমতাময়ী মা ছায়েরা খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুই দফা জানাজা শেষে মরহুমাকে ফরিদগঞ্জ চরকুমিরা গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর স্বামীর পাশে সমাহিত করা হয়।
ছায়েরা খাতুন গতকাল বিকেল পৌনে তিনটায় ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহ...রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর মেজো ছেলে অ্যাডঃ সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং স্পেশাল পিপি (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন)।
ছায়েরা খাতুন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে চাঁদপুর শহরে নিজ বাসায় চিকিৎসা নেন। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাঁকে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এখানকার আইসিইউতে তিনি গত ক’দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টাও চলতে থাকে। এরই মধ্যে মেডিকেল বোর্ড বসে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলতে থাকে। অবশেষে গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল পৌনে তিনটায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তিনি মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান। মুহূর্তে তাঁর মৃত্যু সংবাদ সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। অসংখ্য মানুষ নিজ নিজ ফেসবুকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদসহ শোক জানাতে থাকে। সকলে মরহুমার জন্যে আল্লাহ পাকের কাছে জান্নাত কামনা করে দোয়া করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি তাঁর দপ্তর থেকে শোকবার্তা পাঠান। তিরি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
এভাবে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলসহ আওয়ামী পরিবারের বহু নেতা-কর্মী মরহুমার জন্য শোক জানান এবং তাঁর মাগফিরাত কামনা করেন। জেলা বিএনপি থেকেও শোক জানানো হয়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আরো অঙ্গ সহযোগী সংগঠন থেকে শোক জানানো হয়।
এদিকে রোমানের আম্মা মারা গেছেন, এ খবর শুনে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু নারী-পুরুষ শহরের আদালত পাড়াস্থ মরহুমার বাসায় আসতে থাকে। সকলে মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে সমবেদনা জানান।
মরহুমা ছায়েরা খাতুনের প্রথম জানাজার নামাজ চাঁদপুর শহরের বেগম জামে মসজিদ ঈদগাহে গতকাল রাত ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জানাজার নামাজে ইমামতি করেন ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সন্তোষপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত মাওঃ আব্দুল করিম বিন মোহাম্মদ। এই জানাজার নামাজের পূর্বে বেগম মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতিব মাওঃ মোঃ রুহুল্লাহ (রঃ)-এর ছেলে চান্দ্রা ছামাদিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনম মুহিবুল্লাহ, বর্তমান ইমাম ও খতিব মুফতি মাহবুবুর রহমান ও চান্দ্রা দরবার শরীফের পীর সাহেব ড. এসএম হুজ্জাতুল্লাহ্ মরহুমার জন্য মাগফেরাত কামনা করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। এ জানাজায় অনেক আলেম, মুসল্লি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন।
চাঁদপুর শহরের জানাজা শেষে মরহুমাকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর স্বামীর বাড়ি ফরিদগঞ্জের চরকুমিরা গ্রামের বাড়িতে। এই গ্রামের চিশতিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে গতকাল রাত ১১টায় মরহুমার সর্বশেষ জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমার নিকটাত্মীয় তুহিন। এই জানাজায় ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমানসহ বহু ওলামায়ে কেরাম ও এলাকার মুসল্লিরা অংশ নেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমার স্বামী প্রয়াত অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলামের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।