খাল খনন না করায় ফরিদগঞ্জে কমছে বোরো আবাদের জমি
যথাসময়ে পানি না পাওয়ায় কাক্সিক্ষত ফসল পাচ্ছে না কৃষকরা
কৃষকদের স্বার্থে বহু আবেদন নিবেদন করেও ফরিদগঞ্জে সেচ প্রকল্পের খালগুলো খনন করা হচ্ছে না। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সেচ প্রকল্পের ছোট-বড় অসংখ্য খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে প্রতিবছরই খালের দুই পাড়ের মাটি ভেঙ্গে তা ভরাট হওয়ার পাশাপাশি কুচরিপানার জট লেগে থাকায় খালের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। ফলে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কৃষক পরিবার রয়েছে ৬৪ হাজার ৩৫০টি। ফরিদগঞ্জের সেচ প্রকল্প এলাকায় ছোট-বড় অসংখ্য খাল রয়েছে। সেচ নির্ভর বোরো ধান চাষে আবাদী জমি রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ১শ’ হেক্টর। কিন্তু বর্তমান বছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমি। সেচ নির্ভর জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর। জমিতে পানি দেয়ার জন্যে সেচযন্ত্র রয়েছে ৮শ’ ৯৫টি। জমির প্রকারভেদ হিসেবে এখানে উঁচু জমি রয়েছে ২ হাজার ৭৪৪ হেক্টর, মাঝারি উঁচু জমি ৭ হাজার ৮১১ হেক্টর এবং মাঝারি উঁচু ভূমি রয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর। কৃষিনির্ভর পরিবারের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৩২৮টি। বিশেষ করে শীতের শুষ্ক মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো আবাদ হয় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এই মৌসুমেই সময় মতো জমিতে পানি পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়।
বেশ ক’ বছর খাল খনন না করায় বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যে সময় মতো পানি সরবরাহ না হওয়ায় প্রতি বছরই কমছে বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে কৃষকরা সময় মতো তাদের ফসল আবাদ করা জমিতে পানি দিতে না পারায় কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাল খননের জন্যে দীর্ঘ বছর কৃষকরা দাবি করে আসলেও তাতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফসল উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় খাল খনন না করায় দুই পাড়ের মাটি ভেঙ্গে খালগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি রয়েছে কচুরিপানার জট। এ সময় কাছিয়াড়া গ্রামের নাছির উদ্দীন হাজী বলেন, যথাসময়ে পানি না পাওয়ায় তার ৫০শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ না করে এখন তরকারি গাছ রোপণ করতে বাধ্য হয়েছেন। ধানুয়া এলাকার ফিরোজ আলম বলেন, এক সময় আমি বোরো ধান আবাদের পানি সেচের স্কীম ম্যানেজার ছিলাম। যথাসময়ে পানি না পাওয়ায় এখন অনেকেই বোরো আবাদ থেকে সরে এসেছে। একই এলাকার সালাম বলেন, ধানুয়া এলাকায় খাল ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় খাল দখল হয়ে গেছে। যে কারণে এই এলাকায় আগের মতো বোরো ধান আবাদ করা হয় না।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতা নূরুল আলম ভুট্টো বলেন, দীর্ঘ বছর যাবৎ খনন না করা সেচনির্ভর খালগুলো খননের আবেদন জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর গত কয়েক বছর ধরে কমপক্ষে ৬বার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওই আবেদনে কোনো সাড়া মেলেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আশরাফ গতকাল সোমবার জানান, কৃষকদের ফসল উৎপাদনের স্বার্থে খাল খনন করার আবেদন জানিয়ে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল খননের আবেদন জানিয়ে খালগুলোর তালিকা সম্প্রতি আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ডে ও বিএডিসি বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। দীর্ঘবছর খালগুলো খনন না করায় দুই পাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় কচুরিপানার জট লেগে থাকে। এজন্য কৃষকরা যথাসময়ে পানি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ধানের আবাদ থেকে পর্যায়ক্রমে পিছু হটে আসছে। এর ফলে প্রতি বছরই আবাদী জমির পরিমাণ কমে আসছে।
এ নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, বোরো ফসল উৎপাদনের স্বার্থে ফরিদগঞ্জের সেচনির্ভর খালগুলো খনন করা এখন কৃষকের স্বার্থে জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে কৃষকের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।