মহান মে দিবস আজ
আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের দিন। শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বসহকারে পালিত হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ মুজিববর্ষে গড়ব দেশ’। করোনা মহামারির কারণে এ বছর জনসমাগম এড়াতে বাংলাদেশেসহ বিশ্বের মে দিবসের সব অনুষ্ঠান হবে সীমিত পরিসরে। মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।
দিবসটি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো শ্রম নিবিড় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও হৃদ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, মহামারি করোনাকালে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সবাই সদয় থাকুন। রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস সময়মতো পরিশোধ করুন। যেকোনো ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই দুঃসময় বেশি দিন থাকবে না। প্রকৃতি আবারও স্বাভাবিক হবে, নিরাপদ হবে আমাদের প্রিয় পৃথিবী। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।
শ্রমিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের লড়াই সবচেয়ে কঠিন। এই লড়াই জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই। এই আর্থিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে ইতোমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমজীবী মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে করোনা পরবর্তী সময়ে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাদের জীবনে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর কালো দিন।
করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিকরা। কাজ হারিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে দেশে ফিরে এসেছেন বহু প্রবাসী শ্রমিক। করোনার পরবর্তীতে তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারবে কি না তা এখন অনিশ্চিত। এসব শ্রমিকের জীবনের নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।
অনেকে ছুটিতে এসে ফিরতে পারছেন না। কোনো রকমে সামান্য সাহায্যে তাদের মুখে জুটছে আহার, সেটাও অনিশ্চিত। কারো কারো হয়তো সেটাও জুটছে না নিয়মিত।
করোনায় ভয়াবহতা নেমে এসেছে সব সেক্টরে। এই ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মধ্যে দেশে বেসরকারি সেক্টরে হয়েছে ছাঁটাই। সরকারের তরফ থেকে শ্রমিক ছাঁটাই না করার আহ্বান জানালেও বাস্তবতা ভিন্ন। ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ তথা পুরো পৃথিবী। দ্রুতই মহামারির অবসান হবে। মানুষের জীবন স্বাভাবিক হবে- এটাই এখন কামনা।
যেভাবে এসেছে শ্রমিক দিবস
দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের ১ মে বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। সেদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শ্রমিক সমাবেশ ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।