• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

শুরু হলো আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাস রমজান

প্রকাশ:  ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১১:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অসংখ্য শোকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাদেরকে তাঁর মনোনীত দ্বীন (ধর্ম) ইসলামের মধ্যে কবুল করেছেন। তাঁর দেয়া পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আজ আমরা মুসলিম। এই ইসলাম ও মুসলিম বা মুসলমান শব্দগুলোর মর্মার্থ ব্যাপক, যা অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে, আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী।
ধর্ম মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। নিয়ন্ত্রণহীন জীবন হচ্ছে পশুর। ইসলাম আমাদের ইহজগত ও পরজগত উভয় জগতের জন্যে একটি গাইড লাইন। এই গাইড লাইনের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের পার্থিব জীবনের সবদিক বিবৃত করেছেন। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, হালাল, হারাম, মাকরুহ এসব বিধি-বিধান আল্লাহ আমাদের উপর আরোপ করে দিয়েছেন।
ইসলাম নামক জীবন বিধানটি (দ্বীন) পাঁচটি স্তম্ভের উপর দ-ায়মান। সেগুলো হচ্ছে : কালেমা, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ্ব। এ পাঁচটির মধ্যে প্রথম তিনটি সকল শ্রেণী-পেশার মুসলমানের জন্যে অবধারিত। অর্থাৎ কালেমা তথা আল্লাহর একত্ববাদ ও নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের উপর মনেপ্রাণে পূর্ণ বিশ্বাস ও স্বীকৃতির পর বান্দার উপর দুটি অবশ্য পালনীয় বিষয় অবধারিত হয়ে যায়। সে দু’টি হচ্ছে নামাজ ও রোজা। আর অন্য দু’টি জাকাত ও হজ্ব শর্তসাপেক্ষে ফরজ। নামাজ বলতে আমরা সবাই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজকে বুঝি। আর রোজা বলতে রমজান মাসের ফরজ রোজাকে বুঝি। যদিও পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও রমজানের ফরজ ৩০ রোজা ছাড়াও আরো অনেক ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজ ও রোজা রয়েছে। ইসলামের তৃতীয় রুকন বা স্তম্ভ ‘রোজা’ উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরজ হয়েছে নবী করিম (দঃ)-এর হিজরতের দেড় বছর পর। অর্থাৎ হিজরি সনের দ্বিতীয় বর্ষে শাবান মাসের ১০ তারিখ।
ইসলাম মানব জীবনের আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার যে সব পদ্ধতি নির্ণয় করে দিয়েছে ‘সিয়াম’ বা রোজা পালন তার মধ্যে প্রধানতম। রোজা শব্দটি ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত। আরবি ভাষায় পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে রামাদ্বান (রমজান) ও সাওম এ দু’টি শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে। ‘সিয়াম’ ‘সাওম’ শব্দ হতে উৎপত্তি। ‘সাওম’-এর বহুবচন হচ্ছে সিয়াম। অর্থ বিরত থাকা। আর রমজান শব্দের মূলধাতু হচ্ছে ‘রামযুন’। রমজানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়া। অর্থাৎ মাহে রমজানের রোজা একজন মুসলমানের  পেছনের ১১ মাসের গুনাহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়। এটাই হচ্ছে রমজান নামকরণের মর্মার্থ। আসলে সত্যিই আমরা যদি রমজানের বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত সকল দিক মেনে রমজানের রোজা পালন করি তাহলে অবশ্যই এই রোজা আমাদের পেছনের ১১ মাসের সকল গুনাহকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেবে। আর তখনই হয়ে যাবো আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং পুত-পবিত্র একজন মানুষ।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আয়াত হচ্ছে : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিলো, যেনো তোমরা মোত্তাকী বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৩)। এই আয়াতের মর্মার্থ খুঁজলে প্রধানত দু’টি বিষয় পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে : রোজা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যেই ফরজ করা হয়নি বরং পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের জামানায় তাঁদের উম্মতদের প্রতিও ফরজ করা হয়েছিলো। অপরটি হচ্ছে : রোজার উদ্দেশ্য এই আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে মোত্তাকী বা খোদাভীরুতা অর্জন করা। যেটিকে আত্মার পরিশুদ্ধতা বলা হয়।