• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মানুষ ও যানবাহনের বাঁধভাঙ্গা স্রোত

প্রকাশ:  ০৫ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গতকাল ৪ এপ্রিল রোববার চাঁদপুর শহরে দিনভর বাঁধভাঙা ¯্রােতের ন্যায় মানুষ ও যানবাহনের ¯্রােতে দেখা গেলো। যা চাঁদ রাতকেও হার মানিয়েছে। মার্কেট, শপিংমল ও বাজারগুলোতে মানুষ আর মানুষ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরসহ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তাই ঘরমুখো মানুষের ¯্রােত এবং বাজারে কেনাকাটার জন্য ভিড় লেগে যায়।
আজ ৫ এপ্রিল সোমবার থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহের জন্যে সারাদেশে একযোগে লকডাউন কার্যকর থাকবে। তবে সংবাদপত্র সংক্রান্ত সকল কিছু, খাবার, কাঁচা বাজারের দোকান ও ঔষধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা থাকবে বলে জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। গত ৩ এপ্রিল শনিবার এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে গতকাল এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ হতে মানুষজন শহরমুখী হয়ে পড়ে কেনাকাটা করার জন্যে। অপ্রতিরোধ্যভাবে মানুষের এই শহরমুখী হওয়ার দরুণ শহরে দেখা দেয় তীব্র যানজট। স্থবির হয়ে পড়ে শহরের ব্যস্ততম সকল সড়ক। এ স্থবিরতায় চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা। গত ২ ও ৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম রোববার অফিস খোলার কারণে এ যানজট আরো তীব্র হয়ে উঠে। শহরের কালীবাড়ি, নতুনবাজার মোড়, চিত্রলেখার মোড়, শপথ চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, স্টেডিয়াম রোড, পালবাজার, চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কসহ সকল সড়কেই এই যানজট পরিলক্ষিত হয়। পুরাণবাজার ও নতুনবাজার ব্রিজের সামনে যেনো অটোবাইকসহ অন্যান্য পরিবহনের মেলা বসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদেরকে বসে থাকতে হয়েছে রিক্সা বা মোটরচালিত অটোবাইকে। স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে চলাচল করাও ছিল দুস্কর। যানজট কমাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়। প্রতিটি দোকান, শপিংমলে দেখা গেছে ক্রেতাদের অস্বাভাবিক ভিড়। বিশেষ করে মহিলা ক্রেতার সংখ্যাই ছিল বেশি। তাদের এমন উপস্থিতি যেনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে হয়েছে আজকেই সব কিছু নিয়ে নিতে হবে। আবার কবে সুযোগ পাব কি পাব না, মিলবে কি মিলবে না এমনটাই মনে হয়েছে মুদিখানা দোকানের পরিস্থিতি দেখে। একই দৃশ্য দেখা গেছে কাঁচা বাজারেও। ব্যাপক কাস্টমার দেখে দোকানদারগণও হিমশিম খায়। কোনো কোনো দোকানদার সুযোগ বুঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ক্রাইসিস সৃষ্টি করে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা বেশি দরে বিক্রয় করতেও দ্বিধা করেনি। তবে দাম বেশি বা কম তা নিয়ে ক্রেতা সাধারণ চিন্তিত ছিল না। তারা বেশি চিন্তিত ছিল প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করা নিয়ে। তাদের এই মনোভাব দেখে মনে হয়েছে এখুনি যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করা না যায় তাহলে আসন্ন রোজা হয়তো ঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। প্রতি বছরই রোজার ঠিক এক সপ্তাহ আগে মুদিখানা দোকান সমূহে ক্রেতা সাধারণের ভীড় পরিলক্ষিত হলেও গতকালকের চিত্র ছিল অনেকটা ব্যতিক্রম। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল লকডাউনকে ঘিরে। ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন যদি ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়, তাহলে কী হবে এ চিন্তায় থেকেই তাদের মূলতঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালামাল সংগ্রহ করার মানসিকতা দেখা দেয়। আর তাদের একত্রে শহরমুখী হওয়ার কারণেই এই যানজট। তবে অনেককেই বলতে শোনা যায় শহরে এত যানবাহন এলো কীভাবে। কোথায় ছিল এত যানবাহন। তবে যানবাহন আর মানুষের স্রোত শুধু চাঁদপুর শহরের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পুরাণবাজারেও এই যানজট সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়। পুরাণবাজারের বাতাসা পট্রি, চাল পট্রি, ডাল পট্রি, মিয়া পট্রি, তামাক পট্রি, ট্রাঙ্ক পট্রি, লোহার পুলসহ বিভিন্নস্থানে এ যানজট সৃষ্টি হয়। আর পুরাণবাজারের পাইকারী মুদীখানা থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়াও কাপড়, জুতাসহ অন্যান্য দোকানেও ব্যাপক ক্রেতার উপস্থিতি দেখা যায়। দেখে মনে হয়েছে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তবে নতুনবাজার, পুরাণবাজার সব জায়গাই দেখা দিয়েছে মাস্ক না পরার প্রবণতা। ক্রেতার মুখে মাস্ক আছেতো দোকানির মুখে নেই। মাস্ক যে এখন নিত্যদিনের সঙ্গী তা অনেকেই মানতে রাজি নয়। বিশেষ করে অটোবাইকসহ যানবাহন চালকের অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।

ছবি-০২