• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর যেনো করোনা আবাস ভূমি

প্রকাশ:  ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৩:২৩ | আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৩:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষা অনুসারে শনাক্তের হার মাত্র দশদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। ২১ মার্চের আগে চাঁদপুরে শনাক্তের হার ১০ থেকে ১১ ভাগ থাকলেও ২৫ মার্চ থেকে দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। জাতীয়ভাবে শনাক্তের হার এখনো ২০ শতাংশে গিয়ে না পৌঁছলেও চাঁদপুরে ২১ শতাংশ পার হয়েছে আরও পাঁচদিন আগে। করোনার নমুনা পরীক্ষা কাজের তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অভিমত হচ্ছেÑএখন যারা নমুনা পরীক্ষা করায়, তাদের অধিকাংশই বিদেশগামী। নমুনা সংগ্রহের হিসেবে বিদেশগামীর সংখ্যা প্রায় ৭০ ভাগ। এদের মধ্য থেকে পজিটিভ রিপোর্ট খুব কম আসে। কারণ, তারা সুস্থ থাকার পরও শুধুমাত্র বিদেশ যাওয়ার জন্যে টেস্ট করায়। এদের সংখ্যা বাদ দিয়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হিসেব করলে দেখা যায় যে, ৫০ ভাগের বেশি করোনায় আক্রান্ত। চিকিৎসকদের এই মতামত থেকেই বুঝা যায় চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি কী ভয়াবহ।
চাঁদপুর জেলার গত দশ দিনের করোনার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, জেলার মধ্যে ৯০ ভাগের বেশি আক্রান্ত সদর উপজেলায়। এর মধ্যে আবার চাঁদপুর শহরে আক্রান্ত প্রায় ৮০ ভাগ। এই চিত্র দেখে বলা যায়, এ যেনো করোনাময় চাঁদপুর শহর। বর্তমানে চাঁদপুর পৌর এলাকার এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী নেই। এমনকি এমন বেশ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে একাধিক পরিবার রয়েছে যেসব পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেমন শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক এলাকার বাসিন্দা একটি পরিবারের চারজন সদস্যের গত সোমবার ও মঙ্গলবার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে শহরের পুরাণবাজার এলাকার চেয়ে নতুনবাজার এলাকায় আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি। সূত্র থেকে জানা যায়, শহরের নতুনবাজার, ইচলী, পালপাড়া, আদালত পাড়া, প্রফেসর পাড়া, জোড়পুকুর পাড়, রহমতপুর আবাসিক এলাকা,  চেয়ারম্যানঘাটা এলাকা, ষোলঘর, তালতলা, নাজিরপাড়া, মিশন রোড, স্টেডিয়াম রোড, ট্রাক রোড, মমিনপাড়া, কোড়ালিয়া, গুয়াখোলা, আলিম পাড়া, বড় স্টেশন এলাকা, বাবুরহাট, স্ট্র্যান্ড রোড এলাকা, ব্যাংক কলোনী এলাকা, বিষ্ণুদী এলাকাসহ আরো কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে অনেক পরিবার করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় আছে। তাও এদের নমুনা পরীক্ষা করায় শনাক্ত হয়েছে। অসুস্থতা অনুভব করা মানুষগুলো গড়ে সবাই নমুনা পরীক্ষা করলে শনাক্তের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত গত দশদিনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ১৩২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ২০৩ জনের। এই দুইশ' তিনজনের মধ্যে ১০৮ জন সদর উপজেলার। এই ১০৮ জনের মধ্যে ৮০ ভাগই চাঁদপুর শহরের। গত ২৫ মার্চ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে দেখা যায়, ২৫ মার্চ করোনা শনাক্ত হয়েছে ২২ জনের, এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ জন। এমনিভাবে ২৬ মার্চ ১৫ জনের মধ্যে সদরে ৭ জন, ২৭ মার্চ ২০ জনের মধ্যে সদরে ১৬ জন, ২৮ মার্চ ৩৪ জনের মধ্যে সদরে ২২ জন, ২৯ মার্চ ৩৪ জনের মধ্যে সদরে ১৬ জন এবং ৩০ মার্চ ১৭ জনের মধ্যে সদরে ১২ জন। সদর উপজেলায় আক্রান্তের এই হিসেবে আবার দেখা যায়, এর মধ্যে চাঁদপুর শহরেই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ।
এদিকে ২৮ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত তিনদিনে মারা গেছে চারজন। এর মধ্যে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর আরেকজন করোনার প্রধানতম উপসর্গ প্রচ- শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন ঘণ্টার মাথায় মারা যান।
চাঁদপুর শহরে এতো বেশি আক্রান্ত হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, চাঁদপুর শহরটা একটা ট্রানজিট রূট। এই শহরের উপর দিয়ে ৮/১০টা জেলার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। যার কারণে শহরে সংক্রমিত হয় বেশি। তাছাড়া করোনার বর্তমান ভাইরাসটা খুব দ্রুত ছড়ায়। যার কারণে এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হয়ে যায়।
এদিকে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি এতোটা  ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। কি অফিস আদালত, কি মার্কেট, কি সভা-সমাবেশ। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার লেশমাত্রও চোখে পড়ে না। সামাজিক দূরত্বের কোনো ছিটেফোঁটা তো নাই-ই, এমনকি ৮০ ভাগই মাস্ক ব্যবহার করে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, চাঁদপুর চরমভাবে অরক্ষিত। চাঁদপুর জেলা তো বটেই, সদর উপজেলা এবং চাঁদপুর শহরে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।