ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ জাতীয় দিবস উদযাপনে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা
স্বাধীনতার অন্যতম দলিল বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁদপুর জেলার সর্বত্র ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদ্যাপিত হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টা থেকে অস্থায়ীভাবে নির্মিত বেদীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় মুজিববর্ষে প্রথমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সভাপ্রধানে এবং সঞ্চালনায় আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি ও চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আরো বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লেখক কবি ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার প্রমুখ। কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়।
সভায় মুক্তিযোদ্ধাগণ, প্রশাসনিক অন্যান্য কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ও সরকারি-বেসরকারি বিভাগের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তখন যা চেয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণে তা ফুটে উঠেছে।
তাইতো এ ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম দলিল। বঙ্গবন্ধু এই যে ভাষণটা দিলেন তা ছিল অলিখিত হৃদয় থেকে উৎসরিত এবং স্বতঃস্ফূর্ত। আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ^ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। কাজেই আমাদের উচিত হবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে প্রচার এবং প্রসার করা। এই ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সেটা তুলে ধরা। জেলা প্রশাসক বলেন, জাতির পিতা ৭ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা সরাসরি না দিলেও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের প্রস্তুত থাকার জন্যে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি সবকিছু ব্যাখ্যা করেছিলেন। স্বাধীনতার কোন্ দ্বারপ্রান্তে আমরা এসেছি সে কথা তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন। কাজেই এ ভাষণটির প্রেক্ষাপট জানানো এবং কেনো ৭ মার্চ আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন প্রজন্মকে জানানো অনেক প্রয়োজন। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই এদেশটি স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এ দেশের জন্যে সংগ্রাম করেছেন। এদেশটিকে স্বাধীনতার পর্যায়ে উপণীত করেছেন।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে একজন বাঁশি বাজিয়ে দিলো আর দেশ স্বাধীন হয়েছে, তেমনটা ছিল না। হঠাৎ করে দেশটা স্বাধীন হয়নি। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতাম না। অনেক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীকে আজকের এ দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় আজকের দিনে আমরা একত্রিত হয়ে আলোচনা করতে পারছি।
তিনি বলেন, আজকে নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের প্রেক্ষাপট। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য ঐতিহাসিক এই ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। আজকের এই সভায় আমরা সবাই একমত সরকারকে অনুরোধ করব এই ভাষণটি যেন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে আমাদের দাবিটি জানাতে বিষয়টি কেবিনেটে পাঠানো হবে।
পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাৎক্ষণিক ঐতিহাসিক এই ভাষণ ছিলো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো জাদুকরী ভাষণ। ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল সেই জনসমুদ্রে। অন্যান্য বক্তা ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
এদিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।