শাহরাস্তিতে যাত্রী নিয়ে বোগদাদ বাস খাদে নিহত ২, আহত ৩০
বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনার কারণ
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহরাস্তি উপজেলার মৌতাবাড়ি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই দুজন প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা বোগদাদ এক্সপ্রেস (কুমিল্লা-ব-১১-০০৮৪) বাসটি শাহরাস্তি গেইট দোয়াভাঙ্গা অতিক্রম করে মেহের এলাকা পার হয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকে। এক পর্যায়ে দ্রুতগতির বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৌতাবাড়ি এলাকার রাস্তার উত্তর পাশের গাছের সাথে আঘাত করে খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন যাত্রীদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুর্ঘটনার সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে শাহরাস্তি থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। ঘটনাস্থল থেকেই দুই যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় যাত্রীদের উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও আলীগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। নিহত দুই নারী যাত্রী শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামের মৃত রঞ্জিত দাসের স্ত্রী বিভা রাণী দাস (৬১) ও তার বেয়াইন কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসারের হালগাঁও গ্রামের সুভল ভৌমিকের স্ত্রী গীতা রাণী ভৌমিক (৬২)। নিহত দুই যাত্রী চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে কালিয়াপাড়া থেকে বাসে ওঠেন।
শাহরাস্তি পৌর এলাকার নাওড়া গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা একই পরিবারের ৬ সদস্য পূজা দেয়ার উদ্দেশ্যে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাকবলিত হন। পরিবারের বাকি সদস্যরা সবাই আহত হয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ ক'জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে কুমিল্লায় প্রেরণ করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আলীগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল থেকে ৫ জনকে কুমিল্লায় প্রেরণ করা হয়েছে। তারা হলেন হাজীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাহডর গ্রামের সফি উল্লাহর ছেলে শহিদ উল্লাহ (৫০), মকিমাবাদ গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে আবুল কালাম (৫৫), কুমিল্লা জেলার বড়ুয়া উপজেলার পেউরা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ইয়াছিন (১২) ও আবু তাহেরের স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৪০) ও শাহরাস্তি উপজেলার রাঢ়া গ্রামের ইব্রাহীমের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১২)। দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। রাস্তার দু পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। বেলা আড়াইটায় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। আহতদের মধ্যে বেশ কজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মান্নান উদ্ধার কাজ ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক দর্জি, চাঁদপুর জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল হোসেনসহ স্থানীয় লোকদের উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসা ছিলো প্রশংসনীয়।
ঘাতক বাসটিকে পুলিশ জব্দ করেছে। চালক পালাতক রয়েছে বলে জানা যায়। উক্ত দুর্ঘটনার জন্যে বেপরোয়া গাড়ির গতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।