• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ঘর হস্তান্তর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না

বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারের লোকদের চেয়ে গরিব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন

প্রকাশ:  ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের ৮ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ১৬০ পরিবারসহ সারাদেশের ৪৯২ উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছে সরকার। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্যে সরকারি অর্থায়নে এসব সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। গতকাল শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সকল উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের আয়োজন করা হয়। সদর উপজেলা পরিষদের আয়োজনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ আমাদের জন্যে আনন্দের দিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বঞ্চিত গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরিব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং তাদের জন্যে কাজ করেছেন। এই গৃহ প্রদান কার্যক্রম তাঁরই শুরু করা প্রকল্প। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে আমি তাঁর কন্যা হিসেবে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব মানুষ, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে থাকা মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিলাম এ জন্যে যে, এর মাধ্যমে প্রত্যেককে একটা ঘরের মালিক করে দেয়া। একেবারে নিঃস্ব ভূমিহীন যারা তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেয়ার প্রকল্প করে দিলাম।

বস্তিবাসীদের ঘরে ফেরা কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তিবাসীরা নিজ গ্রামে ফিরে গেলে ছয় মাস বিনা পয়সায় খাবার পাবে, বাচ্চাদের স্কুলে দিতে পারবে। বিনা পয়সায় একটা ঘর করে দেবো আর সেই সাথে টাকা দেবো তারা যেন কাজ কর্ম করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা নিয়ে ঘরে ফেরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলাম। আমরা গৃহায়ন তহবিল করলাম। এই গৃহায়ন তহবিল থেকে এনজিওদের হাতে টাকা দিলাম তারা যেন আমাদের গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেয়। এনজিওরা ২৮ হাজার পরিবারকে এই ঘর করে দিয়েছিল। প্রায় ২০ হাজারের মতো বস্তিবাসী নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল এবং ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১১ হাজার ভবন তৈরী করলাম, ৪ হাজার চালু করে দিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া অন্যান্য প্রকল্পের কথাও সংক্ষেপে উল্লেখ করেন।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন 'বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না'- সেদিন আমরা কিন্তু চিন্তাও করতে পারিনি যে এটি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি এখন তা বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছেন। সে আলোকে প্রথম পর্যায়ে চাঁদপুরে ৭ উপজেলায় ১৬০টি গৃহ হস্তান্তর কাজ শুরু করা হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে ৪৫টি ঘরসহ সর্বমোট ১৬০টি ঘর হস্তান্তর করা হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অসীম চন্দ্র বণিক, ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানা, রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী, রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী ও বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান হোসাইন সজিবসহ জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কয়েকজন উপকারভোগীর হাতে কবুলিয়াত রেজিস্ট্র্রিকৃত দলিল তুলে দেয়া হয়।