কাল চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন
চাঁদপুর পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন আগামীকাল ১০ অক্টোবর শনিবার। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। মোট ৫২টি কেন্দ্রে ৩০৫টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১ লাখ ১৬ হাজার ভোটারের জন্যে এসব কেন্দ্র ও বুথ নির্ধারণ করা হয়।
এ নির্বাচনের একটি বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বড় দুই রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মেয়র পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তীব্রভাবে। আরো আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী। এই তিন প্রার্থী সমানতালে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি পৌরসভার ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৫০ জন এবং সংরক্ষিত পাঁচটি ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ১৪ জন। মোট ৬৭জন প্রার্থী গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জমজমাট প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব প্রার্থীর প্রচারণা ও গণসংযোগে পুরো পৌর নির্বাচনটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এমনকি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়া এমন নির্বাচনী পরিবেশ শুধু চাঁদপুরবাসী নয়, দেশের মানুষও অতীতে খুব কমই দেখেছে। ভোটের দিন পর্যন্ত এই পরিবেশ বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা জনগণের। এ নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মাঝে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সভাপতি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আক্তার হোসেন মাঝি। আক্তার হোসেন মাঝি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার চাঁদপুর পৌরসভায় নির্বাচন করছেন। এর আগে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। অপরদিকে জিল্লুর রহমান জুয়েলের এটাই প্রথম কোনো সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ। তিনি একসময় ছাত্রলীগের খুবই ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। বিএনপি-জামাত জোট সরকার যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো, সে দুঃসময়ে জিল্লুর রহমান জুয়েল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সেখান থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে জেলা আওয়ামী লীগের পদপদবীতে স্থান করে নেয়া। অবশেষে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অসামান্য ত্যাগের পুরস্কার হিসেবে চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে দলের টিকেট পেলেন জিল্লুর রহমান জুয়েল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিলেন। এই নৌকা নিয়ে তিনি নেমে যান নির্বাচনী মাঠে। দিন রাত বিরামহীন গণসংযোগ ও অসংখ্য পথসভায় বক্তব্য দিয়ে পুরো পৌর এলাকায় জুয়েল একটি গণজোয়ার সৃষ্টি করেন। তাঁর ভদ্রতা, নম্রতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সকলকে আকৃষ্ট করেছে। বিশেষ করে নারী এবং তরুণরা তার অসম্ভব ভক্ত। তাঁর পথসভাগুলো জনসভায় রূপ নিতো বিপুলসংখ্যক নারী এবং তরুণের উপস্থিতিতে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিকভাবে চরম বৈরী মনোভাবাপন্ন হলেও চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেলো এর ব্যতিক্রম। একেবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমানতালে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে গেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমান সুযোগ নেয়ার বাহবাও পেয়েছেন জিল্লুর রহমান জুয়েল। কারণ, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি এমন কিছু সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি জনগণকে আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। তাঁর এমন কর্মকা-ে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের সুবাতাস দেখছে জনগণ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে জিল্লুর রহমান জুয়েল পুরো পৌর এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। তিনি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েছেন খাদ্য সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে। এই বিশেষ কারণে মানুষের একটা বিশেষ সহানুভূতি পাচ্ছেন জিল্লুর রহমান জুয়েল। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যাচ্ছে যে, এই নির্বাচনে জিল্লুর রহমান জুয়েলের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।