সাগরের ইলিশে ঠাসা চাঁদপুর মাছঘাট
চলছে ভরা বর্ষা মৌসুম। বিগত বছরে এসময় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ব্যাপকহারে ইলিশ ধরা পড়লেও এবারের চিত্র ভিন্ন। চাঁদপুরের নৌ-সীমানায় অর্থাৎ পদ্মা-মেঘনায় সুস্বাদু ইলিশ ধরা না পড়লেও এখন সাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ।
ওইসব এলাকায় আহরিত বিপুল পরিমাণ ইলিশে এখন ভরপুর চাঁদপুর মাছঘাট। ফিশিং বোট ও সড়কপথে পিকআপে হাজার হাজার মণ ইলিশ এ ঘাটে আসছে। ইলিশের বাণিজ্যকেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ইলিশবোঝাই ট্রলার ভিড়ছে। আরও আসছে পিকআপবোঝাই ডালা এবং ঝুড়িভর্তি ইলিশ। চাঁদপুর মাছঘাট এখন ইলিশে সয়লাব। ঈদের পর টানা ক’দিন এখানে বিপুল পরিমাণে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
এদিকে প্রধান মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিস যুগান্তরকে জানান, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ এবং চর-উপচর জেগে ওঠায় ইলিশের গতি প্রবাহ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। মাত্র ইলিশের মৌসুম শুরু হল। সহসাই চাদপুরের পদ্মা-মেঘনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। অপরদিকে ইলিশ নিয়ে স্থানীয় আড়তদার, বে?পারি আর পাইকারি ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর মাছঘাট। তবে দাম এখনও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে বেশি। বড় সাইজের ইলিশ ৮০০ থেকে হাজার টাকা কেজি, যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
শনিবার দুপুরে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, হাজী মালেক খন্দকার, কালু ভূঁইয়া রোটারিয়ান আবদুল বারী জমাদার মানিক, শবে বরাত সরকার, বাবুল হাজী, মেজবাহ মাল, বড় সিরাজ চোকদার, ছোট সিরাজ চোকদার, ইকবাল বেপারিসহ অন্যরা ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় ও আড়তদারিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পরিচিত-অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলার সময় নেই অনেকের। ইলিশের স্তূপের কারণে পা রাখারও জায়গা নেই। এসব ইলিশ হাতিয়া, পাথরঘাটা, দৌলতপুর, মনপুরা এলাকা থেকে আসছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে হাতিয়ার ইলিশই বেশি। চাঁদপুর ঘাটে আসা ফিশিং বোটের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৩ জুলাই থেকে ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে বেরিয়ে পড়ে। ২৫ জুলাই থেকে এসব ট্রলার মাছভর্তি করে তীরে ফিরছে জেলেরা।
জেলেরা জানান, সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। এবার ইলিশের আকারও বেশ বড়। চাঁদপুর ঘাটে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন চাঁদপুর মাছঘাটে প্রায় ৩ হাজার হতে ৪ হাজার মণ ইলিশ মোকামিরা নিয়ে আসছে বলে জানা যায়। এদিকে চাঁদপুর মাছঘাটে নতুন ইলিশের সঙ্গে পুরনো ইলিশ মিশ্রিত করে বিক্রির অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো ক্রেতা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন এখানকার ইলিশ ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, চাঁদপুর ঘাটে যে মাছ আসে তা তিনটি গ্রেডে ভাগ করে বিক্রি করা হয়। পচা মাছ যেটা বের হয় তার দাম অনেক কম ও সেসব মাচ লোনা করা হয় বলে জানান তারা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত জানান, ইলিশের প্রধান মৌসুম এখন চলছে। কিন্তু রেলওয়ের জায়গায় তিন হাজার বর্গফুটের মধ্যে অত্যন্ত গাদাগাদি করে মাছ ব্যবসা করতে হচ্ছে। অথচ ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন মানুষজন এখানে ইলিশ কিনতে আসেন। মাছঘাটে ঢুকে দাঁড়ানোর জায়গা অনেক সময় না পেয়ে হতাশ হয়ে চাঁদপুর মাছঘাট সম্পর্কে বিরূপ ধারণা করেন। সহসাই ইলিশের পরিমাণ আরও দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ বৃদ্ধি পেলে কোথায় মাছের সংকুলান হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা। তিনি অবিলম্বে বড় পরিসরে মাছঘাটকে সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন।