• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে অপপ্রচার ॥ ফরক্কাবাদ কলেজ ও মাদ্রাসার ৩ শিক্ষক গ্রেপ্তার

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০২০, ২০:১৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে শিক্ষামন্ত্রী ও চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনিকে নিয়ে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে কলেজ ও মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে আটক করেছে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ। ১৯ জুলাই রোববার রাত ১০টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের আইটি কক্ষের গোপনীয় শাখা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
আটককৃতরা হলো : ফরক্কাবাদ কলেজের তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষক নোমান সিদ্দিকী (৩৫), ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং পাশের ফরক্কাবাদ সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসার শিক্ষক আনিছুর রহমান শরীফ (৪০)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী। সাথে ছিলেন মডেল থানার এসআই রেজাউল করিমসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নোমান সিদ্দিকী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া এবিএম আনিসুর রহমান ও নোমান সিদ্দিকী আপন দু ভাই।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, বালিয়ার কুমুরুয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান মিজির দায়ের করা মামলায় এ তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ ও তিনটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়। এসব দিয়ে আসামীরা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করতো। অভিযানকালেও তাদেরকে ‘জয় আহমেদ’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই কাজে রত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাদেরকে আটকের বিষয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে চাঁদপুর মডেল থানায় আসামীদের উপস্থিত করে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী জানান, করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের গোয়েন্দা পুলিশের কঠোর নজরদারিতে সাইবার ক্রাইমের একটি দুষ্ট চক্রকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই। তিনি জানান, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আয়েশা খন্দকার’ নামে একটি ফেক আইডি খুলে ফেসবুকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে গুজব ও মিথ্যা অপপ্রচার চালাতেন। এ অভিযোগে হান্নান মিজি গত এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। তারই সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করে এর সত্যতা পেলে এটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়। এরপর আমাদের গোয়েন্দারা এটি নিয়ে কাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায় ফরক্কাবাদ কলেজ। সে আলোকে রোববার রাত প্রায় ১০টার দিকে ফরক্কাবাদ কলেজের ভেতরে অভিযান চালিয়ে কলেজের আইটি কক্ষের গোপনীয় শাখা থেকে ওই তিনজন শিক্ষককে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এরা বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে অভিযোগও পাঠাতো। এমন একটি অভিযোগের কপিও আমরা উদ্ধার করেছি। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে আসামীদের বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হবে। এর পেছনে আরো কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে। পুরো চক্রটিকে ধরা হবে।
তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, গ্রেফতারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে পূর্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে। যে কারণে পুলিশ ওই সূত্র ধরেই সামনে এগিয়ে যায়। তার ফলে তাদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়।
উপস্থিত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, একে তো কলেজ বন্ধ, তারপর আবার রাতের বেলা কলেজের ক্যাম্পাসের ভেতরে আইটি শাখার রুমের ভেতর থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। তাহলে এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অবহিত আছেন বুঝা যাচ্ছে। এ বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন। জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই এ বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। এ সব কিছু তদন্তে বেরিয়ে আসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরা কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন করেছিলাম। তার নাম্বার বন্ধ পেয়েছি। তিনি আরো জানান, এ চক্রটি এতই ধূর্ত যে, তারা এই ফেক আইডির ক্ষেত্রে দেশীয় সীম ব্যবহার করেনি। বিদেশে অবস্থানরত তাদের পরিচিতজনদের সীম ব্যবহার করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদ, ওসি (অপারেশন) মোরশেদুল আলম ভূঁইয়াসহ অন্য অফিসারগণ।