• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট : চাঁদপুরের স্বাস্থ্য খাতে এক নবদিগন্তের সূচনা

ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতাও এখানে রয়েছে : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি

প্রকাশ:  ১২ জুলাই ২০২০, ০৯:০২
এএইচএম আহসান উল্লাহ
প্রিন্ট

চাঁদপুরের স্বাস্থ্য খাতে এক নবদিগন্তের সূচনা হলো গতকাল। জেলার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আড়াই শ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সংযোজন হলো সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ প্লান্ট। গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্লান্টের যাত্রা শুরু হলো। এর উদ্বোধন করলেন যেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতায় এ অক্সিজেন প্লান্টটি হলো, সে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের নামে প্রতিষ্ঠিত মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানে এই অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হয়েছে। ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের গর্বিত দুই সন্তান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু হচ্ছেন এর উদ্যোক্তা। তাঁরা দুজন প্রথমে নিজস্ব অর্থায়নে তাঁদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের উদ্যোগে এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জানতে পেরে তিনিও এই প্রকল্পে অনুদান প্রদান করবেন বলে ডাঃ দীপু মনিকে জানান। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।

গতকাল শনিবার এই অক্সিজেন প্লান্টটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ঢাকায় অবস্থান করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন। চাঁদপুরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে।

শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এই অক্সিজেন প্লান্টটি স্থাপনের কাজ কীভাবে শুরু হলো তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাঁদপুরে যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো, তখন জেলা সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যেতে লাগলো। একই সাথে খুব খারাপ রোগী হাসপাতালে আসতে শুরু হলো। আর এই রোগের খারাপ অর্থাৎ মুমূর্ষু অবস্থার রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানতম সাপোর্ট হচ্ছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন। যা একমাত্র সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু এ হাসপাতালে আগে থেকেই এ ব্যবস্থা নেই। তখন আমি আর আমার বড়ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপুসহ উদ্যোগ নেই আমাদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থায়নে এই অক্সিজেন প্লান্টটি আমরা করে দেবো। আর এর জন্যে আমি আমার মেয়াদপূর্ণ হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে উত্তোলিত টাকা এ খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেই। আমার বড়ভাইও আমাকে বাদবাকি টাকার যোগান দেয়ার আশ্বাস দেন। এরই মাঝে একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি প্রসঙ্গক্রমে চাঁদপুরে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট এবং আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে আলাপ করি। প্রধানমন্ত্রী যখন জানতে পারলেন আমি আমার সঞ্চয়পত্রের অর্থ এখানে ব্যয় করছি, তখন তিনি খুব আনন্দিত হয়ে তিনি নিজেও এখানে অনুদান প্রদান করার কথা আমাকে বললেন। সে জন্যে আমি আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি আরো জানান, এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের সাথে আরো যোগ হচ্ছে চারটি হাই ফ্লো নেজেল ক্যানুলা। এর দ্বারা মুমূর্ষু রোগীকে তার চাহিদা অনুযায়ী খুব দ্রুত অক্সিজেনের চাপ বাড়ানো যাবে। এই চারটি নেজেল ক্যানুলা দিচ্ছেন ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান সবুর খান ২টি, কল্যাণপুর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম শাহীন পাটওয়ারী ১টি এবং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান ১টি।

ডাঃ দীপু মনি বলেন, চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালে আজ থেকে যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের যাত্রা শুরু হলো এটির সুফল যেনো রোগীরা ঠিকভাবে পায় এবং এর রক্ষণাবক্ষেণ যেনো যথাযথভাবে নেয়া হয় সে দিকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান এবং ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনের উপস্থাপনায় বেশ কয়েকজন অতিথি জুম অ্যাপের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তাঁদের অনেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আবার কেউ কেউ নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করে জুম অ্যাপের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব-উল-করিম। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিতবরণ দাশ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ জামাল সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডাঃ এসএম সহিদ উল্যাহ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, পুরাণবাজার কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএমএর সভাপতি ডাঃ সৈয়দ নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম, হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, জেলা স্কাউট সম্পাদক অজয় ভৌমিক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আলম মিল্টন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, শিক্ষামন্ত্রীর স্থানীয় প্রতিনিধি অ্যাডঃ সাইফুদ্দিন বাবু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বর্তমান করোনাকালে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের ২৫টি বেডে এবং তৃতীয় তলায় ২টি কেবিনের ৫টি বেডে এই অক্সিজেন প্লান্ট থেকে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে।