রেড জোনের পাঁচ স্পটে লকডাউনের সব প্রস্তুতি
ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রেড জোন এলাকার পাঁচটি স্পটে লকডাউন কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই লকডাউন কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে রাজধানী ঢাকার দুটি স্পট, নারায়ণগঞ্জের একটি, নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা এবং গাজীপুরের একটি স্পটে শুরু হবে লকডাউন কার্যক্রম। রেড, ইয়োলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করে সারা দেশের একটা ম্যাপিং তৈরি করা হয়েছে। লকডাউন কীভাবে কার্যকর করা হবে, কারা কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন- তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন সবাই আছেন ওই প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা গেলেও গতকাল দিনভর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে কভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ে পুরনো তথ্য তুলে ধরার কারণে লকডাউন নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। অনেক গণমাধ্যম ওই ওয়েবসাইটের তথ্য তুলে ধরে জানায়, সারা দেশে ৫০টি জেলা ও ৪০০ উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু এটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, এটি পুরনো তথ্য। এদিকে কভিড-১৯ এর রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকা এবং নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের দুটি স্পট লকডাউন নিয়ে গতকাল দিনভর মানুষের মধ্যে কৌতূহল ছিল। শেষ পর্যন্ত সব প্রস্তুতি থাকার পরও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। গতকাল নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম। উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা না আসায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যেতে পারিনি। তিনি বলেন, আদেশ আসামাত্রই মাধবদী পৌরসভাকে লকডাউন করা হবে। ডিসি আরও জানান, তারা এরই মধ্যে মাধবদী পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বেশ কিছু কমিটি গঠন করেছেন। ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা লকডাউনের সময় বিভিন্ন ধরনের কাজ করবে। কেউ মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেবে। কেউ কভিড-১৯ রোগীদের দেখভাল করবে। কেউবা অন্য কাজ করবে। তিনি জানান, লকডাউনকালে ওই এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না, ঢুকতেও পারবে না। কোনো প্রকার যানবাহন চলবে না। দূরপাল্লার গাড়ি মাধবদীতে থামবে না। এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং কভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, প্রথম পাঁচটি স্পটে লকডাউন কার্যকর করার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত পেলেই সেটি বাস্তবায়ন হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে কভিড-১৯ বিষয়ক লকডাউন সম্পর্কিত যেসব তথ্য রয়েছে সেগুলো পুরনো। এদিকে আইইডিসিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে লকডাউন কার্যকরের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও দফতর জড়িত। স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, আইসিটি মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিটি করপোরেশনসহ অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সংস্থা লকডাউন কার্যকরে কাজ করবে। এজন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করা হয়েছে। কোন কোন এলাকা রেড জোন, কোন এলাকা ইয়োলো জোন এবং কোন এলাকা গ্রিন জোন তার একটা ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সব মিলিয়ে একটা প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআরের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রেড জোন এলাকায় কোনো ধরনের যানবাহন চলবে না। এমনকি রিকশা, ভ্যান কিছুই চলাচল করতে পারবে না। রেড জোনের আওতাভুক্ত এলাকায় বড় রাস্তায় কোনো রকম গণপরিবহন থামতে পারবে না। এরকম আরও অনেকগুলো বিষয় আছে। এদিকে লকডাউন বিষেন্ডেয় সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানতে গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েক দফা কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।