• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বঙ্গোপসাগরে শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্ফান ভয়াবহ শঙ্কা

প্রকাশ:  ১৯ মে ২০২০, ১০:৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সোমবার দিনের প্রথম ভাগেই সর্বোচ্চ তীব্রতার একটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত দীঘা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী সমুদ্রতটের কোনও একটি জায়গা দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তীব্রতার মাপকাঠিতে এই ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যেই অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আম্ফানের মোকাবিলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার বিকেলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এক টুইট বার্তায় বলেছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আম্ফান নামের ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ প্রবল বা এঙ্ট্রিমলি সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এর মাত্র ঘণ্টা পরই তারা আবার টুইটে ঘোষণা দেয়, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সেটি একটি সুপার সাইক্লোনে বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

কোথায়, কবে আঘাত হানবে?

দিলি্লতে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, আম্ফান নামে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে বুধবার আমরা সবচেয়ে বড় বিপদের আশঙ্কা করছি। সেদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কোনও একটা সময় এটা উপকূলে আছড়ে পড়বে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি শুরু হবে। বুধবার সকাল থেকে তার সঙ্গে যোগ হবে তীব্র ঝড়ো বাতাস। ঝড়টি এখন উত্তর-উত্তর পূর্ব অভিমুখে এগোচ্ছে। বুধবার এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা আর বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝি কোনও একটা এলাকা দিয়ে সমুদ্রতট অতিক্রম করবে।

'ডাঙায় আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।'

ভারতের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের অন্তত ৩৭টি দলকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশায় এই ঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ওই বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন। ঠিক বছরখানেক আগেই ঊড়িশাতে আছড়ে পড়েছিলো সাইক্লোন ফণী। তবে এবার আম্ফানের আঘাত থেকে ওই রাজ্যটি বেঁচে গেলেও যেতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের একটা বিস্তীর্ণ অংশ নিয়ে তেমন একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না; যার একটা বড় কারণ আম্ফানের তীব্রতা।

আম্ফানকে নিয়ে ভয় কেন?

ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট বলেন, এই শতাব্দীতে প্রাক-মনসুন পর্বে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটাই কিন্তু প্রথম সুপার সাইক্লোন। এর আগে ২০০৭ সালের জুনে আরব সাগরে সুপার সাইক্লোন গোনু তৈরি হয়েছিল। যেটা পরে ওমানের দিকে সরে যায়।

তিনি বলেন, আম্ফান এর মধ্যেই ঘণ্টায় দেড়শ' কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে 'প্যাক' করে নিয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড।

পালাওয়াট বলেন, উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে। তবে তারপরও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই। স্থলভূমি থেকে শুকনো বাতাস এসে সিস্টেমটাকে কিছুটা দুর্বল করে দেয়; এই আম্ফানের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটবে।

'কিন্তু তার পরও এটা একটা প্রচ- সাংঘাতিক ঘূর্ণিঝড়; যার তা-ব আর ক্ষয়ক্ষতি সাধনের ক্ষমতা মারাত্মক। ফলে উপকূলীয় এলাকাজুড়েই মানুষকে সাবধান থাকতে হবে।'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার বিকেলে সুপার সাইক্লোন মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে বসেছেন, পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্য সরকার উপকূলীয় এলাকার সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে বিপর্যয় মোকাবিলা দল পাঠাতে শুরু করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই দলগুলো ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালাবে সামাজিক দূরত্বের শর্ত মেনেই। বিবিসি বাংলা।