করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০৬, শনাক্ত আরও ৭০৯
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি করোনাভাইরাস আরও সাতজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এতে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো ২০৬। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৭০৯ জন। ফলে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৪।
শুক্রবার (৮ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ৩৫টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৭০৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় পাঁচ হাজার ৯৪১টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ১১ হাজার ৪৫৪টি। নতুন নমুনাগুলি পরীক্ষা হয়েছে মোট ৩৫টি ল্যাবে। গতকাল পর্যন্ত আমরা ৩৪টি বলেছিলাম। ৩৪ নম্বর ল্যাবটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। আজকে আমাদের সাথে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ল্যাব। এই নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৭০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও সাতজন। এদের পাঁচজন পুরুষ, দুজন নারী। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০৬-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯১ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ১০১ জন।
গত বৃহস্পতিবার (৭ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৬ জন। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।
শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১০৩ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন এক হাজার ৮৭৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৯৯০ জন।
করোনা চিকিৎসার জন্য সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে আট হাজার ৫৯৪টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে দুই হাজার ৯০০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ হাজার ৬৯৪টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউর সংখ্যা ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট ১০২টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে মোট কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৬১৯ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৬ হাজার ৬৫০ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৯৭৬ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৬৭ হাজার ৫০৪জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৯ হাজার ১৪৬ জন।
দেশের ৬৪ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনের জন্য ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে করোনা সেবা দেয়া যাবে ৩০ হাজার ৯৩৫ জনকে।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাসের কবলে। মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া ৩৯ লাখ। মৃতের সংখ্যা প্রায় পৌন তিন লাখ। তবে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী রোববার (১০ মে) থেকে শর্তসাপেক্ষে শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ মে) থেকে শর্তসাপেক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায়ে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে মসজিদও।